শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: ভিনরাজ্যের নাবালকদের অপরাধমূলক কাজে লাগিয়ে শহর শিলিগুড়িতে (Siliguri) একটি দুষ্কৃতীচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এভাবে নাবালকদের কাজে লাগিয়ে চক্রটি প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা রোজগার করছে (Crime)। সম্প্রতি শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের (Siliguri Police) কাছে এমনই তথ্য প্রকট হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই চক্রের সদস্য হিসেবে নাবালকদের বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। শিলিগুড়ির রাস্তাঘাটই তাদের বাসস্থান। এই নাবালকদের কাজ বলতে, মোবাইল ফোন চুরি। চক্রের চাঁই (মিডিয়েটর) পরে তাদের কাছ থেকে মোবাইলগুলি নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে। বিহার থেকেই শিলিগুড়িতে এই চক্রটি অপারেট করা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই মিডিয়েটরের খোঁজ শুরু করেছে। যদিও চক্রের ওই চাঁই সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্যই পুলিশের কাছে না থাকায় বিভিন্ন সূত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। নাবালকদের ধরপাকড়ে আইনের বেশকিছু নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মকে কাজে লাগিয়েই চক্রটি নাবালকদের ব্যবহার করছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশকর্তাদের কথায়, অনেক সময় মোবাইল পাওয়া গেলেও যাঁর মোবাইল ফোন তিনি অভিযোগ করতে চাইছেন না। আবার অভিযোগ করলেও ওই নাবালকদের দার্জিলিংয়ের জুভেনাইল কোর্টে নিয়ে যেতে হচ্ছে। যদিও সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের জামিন হয়ে যাচ্ছে। এরপর তাদের হোমে নিয়ে এসে রাখতে হচ্ছে। যদিও এক-দুটি হিয়ারিংয়ের পরেই পরিবার এসে তাদের নিয়ে যাচ্ছে। এরপর অবস্থা ফের যে-কে-সেই।
বিষয়টা নিয়ে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অলোক ধাড়ার বক্তব্য, ‘আসলে এই দুষ্কৃতীরা আইনের ফাঁক বের করে ফেলেছে। নাবালকদের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাবালকরা যে জুভেনাইল অ্যাক্টের আওতায় ছাড়া পেয়ে যাবে তা এরা বুঝে গিয়েছে। আসলে এই চক্রের পিছনে যারা মাথা, তাদের ধরা না গেলে কোনওদিনই এই সমস্যা মিটবে না।’ চক্রের পিছনে যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ওয়েস্ট) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল চুরির অভিযোগে এক নাবালককে স্থানীয়রা জংশন এলাকায় ধরেছেন বলে সম্প্রতি প্রধাননগর থানার পুলিশের কাছে খবর আসে। এরপর পুলিশ গিয়ে ওই নাবালককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মোবাইলটি মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ওই নাবালককে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুলিশের আধিকারিকদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ওই নাবালক ঝাড়খণ্ড থেকে এসে গত কয়েকমাস ধরে শহর শিলিগুড়িতেই রয়েছে। এই চক্রে আরও আটজন নাবালকও রয়েছে। বিহার থেকে এই চক্রটিকে চালনা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ারেও এ ধরনেরই একটি চক্র সক্রিয় হয়েছিল। যদিও সেই চক্রে ব্যবহার হওয়া নাবালকরা স্থানীয় ছিল। শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে নাবালকরা অবশ্য বাইরের। রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ভিড় এলাকায় এই চক্রটি সক্রিয়। শহর শিলিগুড়িতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু ঘটনায় এগজস্ট ফ্যানের ফোকর গলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রেও এই নাবালকদের ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জোরালো হয়েছে।