শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

Siliguri | পাড়ায় বসত করে কয়জনা, কেউ জানে না

শেষ আপডেট:

শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: এরা ঠিক যেন পরিযায়ী। দেবীডাঙ্গায় যাঁরা জমি কিনে বাড়ি বানিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা বা সিকিমের বাসিন্দা। শীতকালে তাঁরা পরিবার নিয়ে এখানে আসেন। দু-তিন মাস কাটিয়ে ফেরেন নিজ গৃহে। তাই প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা গভীরে পৌঁছায় না। কে আসছেন, কতদিন থাকছেন, আদৌ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন কি না- সেসব খোঁজ রাখার প্রয়োজনও বোধ করেন না।

বৃহস্পতিবার দেবীডাঙ্গার হিমকোর্স ভবন এলাকায় একটি দোতলা বাড়ি থেকে নরকঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। দশ মাস ধরে ঘরের ভেতর দেহটি পড়ে থাকলেও ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। অবাক হওয়ার মতো ঘটনাই বটে। স্থানীয়দের সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে স্পষ্ট হল, যাঁরা এলাকার পুরোনো বাসিন্দা, তাঁদের সঙ্গে ‘পরিযায়ী’-দের মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

শিলিগুড়ির (Siliguri) চম্পাসারি মূল রাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরে ঢুকতে হবে হিমকোর্স ভবনে পৌঁছাতে। শুনসান রাস্তার দু’পাশে খালি জমি আর কিছু নির্মীয়মাণ অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি। চলার পথে কয়েকটি বাড়ির ভেতর থেকে আওয়াজ আসছিল টাইলস কাটার। চর্চিত বাড়ির সামনে দেখা গেল, কয়েকজন তরুণ দাঁড়িয়ে গল্প করছেন নীচু স্বরে। মাঝেমধ্যে আবার বাড়িটির দিকে তাকাচ্ছেন।

-আপনারা কী এলাকার? কঙ্কাল উদ্ধার হওয়া বাড়ির কাউকে চিনতেন?

একজন হিন্দি ভাষায় উত্তর দিলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগেই একটি বাড়িতে ভাড়ায় এসেছি। চিনি না কাউকে।’

সেখান থেকে খানিকটা এগিয়ে নজরে পড়ল, টিনের একটি ছোট ঘর। তার সামনেই অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। কংক্রিটের নির্মাণের আড়ালে চলে গিয়েছে ঘরটি। ডাকাডাকির পর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন মঞ্জু মাহাতো। আলাপচারিতার পর মঞ্জু বললেন, ‘আমাদের জন্ম এখানে। আশপাশে কারা আসছে-যাচ্ছে, বোঝা যায় না। ওরা সবাই বড়লোক। আমাদের সঙ্গে তেমন কথা বলে না। আমরাও বলি না।’

তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, পাহাড় থেকে এসে অনেকেই জমি কিনেছেন এখানে। তারপর বাড়ি বানিয়ে কেউ ভাড়ায় দিচ্ছেন, কেউবা আসছেন শুধুমাত্র শীতকালে। একদল আবার নিজেদের জমি কয়েকগুণ দামে বিক্রি করেছেন প্রোমোটারের কাছে। সেখানে মাথা তুলছে অ্যাপার্টমেন্ট।

ছোট মুদির দোকান চালান ববিতা মাহাতো। কঙ্কালের প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘ওই মহিলা একটি ছোট মেয়েকে নিয়ে মাঝেমধ্যে দোকানে আসতেন সামগ্রী কিনতে। গতবছর শুরুর দিকে একবার এসেছিলেন। তারপর আর দেখিনি। তবে উনি কোন বাড়িতে থাকতেন, সেটা জানতাম না। কে অত খবর রাখে। কেউ পরিচিতি বাড়াতে না চাইলে, আমরা আগ বাড়িয়ে আলাপ জমাই না।’

বছর তিনেক হল বাড়ি বানিয়েছেন ওয়াংচু ভুটিয়া। তাঁর কথায়, ‘জায়গাটি খুব শান্তিপ্রিয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসেন। সারাবছর খুব কম লোকই থাকেন। আমরাও থাকি না। তাই ততটা সখ্য তৈরি হয় না।’

মঞ্জু, ববিতা হোক বা ওয়াংচু- সকলের কথায় একটাই প্রতিধ্বনি শোনা গেল, পাড়ায় নতুন লোকজন কোথা থেকে কতজন আসছেন, তাঁরা কেমন, কারও কোনও সমস্যা হল কি না ইত্যাদি নিয়ে প্রতিবেশীদের আগ্রহ প্রায় নেই বললেই চলে।

তবে বৃহস্পতিবারের ঘটনা মনে দাগ কেটেছে দেবীডাঙ্গার পুরোনো বাসিন্দাদের। সনু মুন্ডা নামে এক তরুণের মতে, ‘এলাকায় লোকসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কঙ্কাল উদ্ধার আমাদের ভাবার বাইরের ঘটনা। কিছুদিন আগেই এখানে গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছিল। পথবাতি নেই, রাতে কে বা কারা পাড়ায় ঢোকে, কোন বাড়িতে লোক আসে, তাঁরা কী করে- কেউ জানে না। বহিরাগতরা নেশার আসর জমাচ্ছে এলাকায়। নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করে সবাইকে একজোট হতে হবে। বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে বড় বিপদ হতে পারে।’

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Share post:

Popular

More like this
Related

Karnataka | কর্ণাটকের ‘বিপজ্জনক’ গুহাতে বসবাস রুশ মহিলা ও তাঁর মেয়েদের! উদ্ধার করল পুলিশ

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কর্ণাটকের গোকর্ণের রামতীর্থ পাহাড়ের চূড়ায়...

Patiram | সবাই এখন প্রথম সারিতে! ‘ইউ’-আকৃতির আসনে বদলাচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ

পতিরাম: ক্লাসরুমে আর কোনও ব্যাকবেঞ্চার থাকবে না—এই ধারণা বাস্তবে...

Bakshirhat | বাড়ির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গৃহবধূর দেহ! ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য বক্সিরহাটে

বক্সিরহাট: সকাল থেকে বাড়িতে নেই পুত্রবধূ। তন্নতন্ন করে খোঁজার...

Migrant labor death | টাওয়ার থেকে পড়ে বিপত্তি, রাজস্থানে মৃত্যু রতুয়ার এক পরিযায়ী শ্রমিকের

সামসী: রাজস্থানে টাওয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক পরিযায়ী...