Exclusive

Siliguri | এখনও ঘুম ভাঙল না পুলিশের, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: হাতে লাঠি নিয়ে হাসমি চকে দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ। কিন্তু ট্রাফিকে ‘শাসনের’ কোনও বালাই নেই। পুলিশের চোখের সামনেই দিব্যি যাত্রী তুলছে-নামাচ্ছে ম্যাক্সিক্যাব, টোটো। অথচ পুলিশ সব দেখেও নীরব। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, ট্রাফিকের গাফিলতিতে বুধবার শিলিগুড়ির (Siliguri) হাসমি চকের মতো জায়গায় একটি তরতাজা প্রাণ চলে গেলেও ঘুম ভাঙেনি পুলিশের কর্তাদের। দেখছি, দেখব বলেই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। আর পুলিশের এই ভূমিকায় ক্ষোভ ক্রমশ চড়ছে শহরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social media) উঠছে প্রতিবাদের ঝড়।

হাসমি চকের ট্রাফিক কিয়স্ক থেকে দূরত্বটা মেরেকেটে ১০০ মিটার। বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ এখানেই বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় ম্যাক্সিক্যাব পিষে দেয় রবীন্দ্রনগরের গৃহশিক্ষিকা রাখি বিশ্বাসকে। ম্যাক্সিক্যাবটি সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাচ্ছিল, অথচ সেখানে দাঁড়ানোর কথাই নয়। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই নিয়ম ভেঙে যাত্রী নামালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, এমন অভিযোগও উঠে এসেছিল। কিন্তু সেসব অভিযোগ যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে পুলিশের। মৃত্যুতেও তাই টনক নড়ে না তাদের।

বৃহস্পতিবার ঠিক বারোটা নাগাদ দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, ছবিটা এতটুকুও বদলায়নি। রক্তের দাগও মুছে যায়নি অকুস্থল থেকে। কিন্তু দিব্যি বিনা বাধায় সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাচ্ছে ম্যাক্সিক্যাব। খানিক দূরেই হাসপাতালের ট্রাফিক কিয়স্ক। সেখানে যেমন লাঠি হাতে বাইকচালক, স্কুটারচালকদের শাসনে ব্যস্ত পুলিশে, তেমনই হাসমি চকেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের চোখ খুঁজছিল বিনা হেলমেটের বাইকচালকদের। দিনের বাকি সময়ও এমন ছবিই চোখে পড়েছে।

ডাঃ পার্থপ্রতিম পান সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। প্রশাসন কর্তৃক সাধারণ মানুষকে হত্যা। একসময়ের সবার গর্বের শিলিগুড়িতে আমরা রাস্তায় হাঁটতে ভয় পাই।’

কোর্ট মোড় থেকে সোজা মহাত্মা গািন্ধ চক বা এয়ারভিউ মোড় পর্যন্ত রাস্তায় দিনের বেশিরভাগ সময় চলাফেরা যেন বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। টোটো, অটো, ম্যাক্সিক্যাব, বাস কেউ কোনও নিয়ম মানছে না। যখন-তখন যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়া, সিগন্যাল অমান্য করা, উলটো লেনে ঢুকে পড়া হামেশাই চলছে। ট্রাফিক সামলাতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করার কথা বারবার বলছে কমিশনারেট। কিন্তু সেই ট্রাফিক পুলিশকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ বড়কর্তারা, উঠছে এমন অভিযোগ। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর এদিনও যথারীতি বলেছেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

সাধারণ মানুষ অবশ্য কিছুতেই তাঁর সঙ্গে একমত নন। পেশায় আইনজীবী সৌভিক গুণ লিখেছেন, ‘হাসপাতাল মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ টাকা নেওয়া ছাড়া কোনও কাজ করে না। শহরজুড়ে শুধু বাইকের কাগজ দেখার নিয়ম হয়েছে বোধহয়। হয় চালান কাটো, নইলে ওই ছোট ঘরে ডেকে টাকা নাও। কোর্ট মোড় ফুটপাথ দখল করে ফলের দোকান বসছে। সবার সব কিছু নজরে পড়ে, শুধু প্রশাসনের পড়ে না।’

শহরের মানুষ এখন রাস্তায় বেরোতে রীতমতো ভীতসন্ত্রস্ত। শহরের ফুটপাথও যে নিরাপদ নয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রাখির মৃত্যু। গৃহশিক্ষিকা হিসেবে জনপ্রিয় রাখির মৃত্যু তাই মেনে নিতে পারছেন না শহরবাসী। তুলছেন নানা প্রশ্ন। পুলিশের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ আগে কখনও চোখে পড়েনি। সমীর দে বলছেন, ‘ধিক্কার এই প্রশাসনকে। কবে এই শহর ঠিক জায়গায় ফিরবে? আর কত?’

উৎপল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘শিলিগুড়ি শহরে যান নিয়ন্ত্রণের চাইতে বাইক-স্কুটির কাগজ পরীক্ষা করায় গুরুত্ব দিচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়ার, ট্রাফিক কনস্টেবলরা।’ মলিনা হালদার লিখেছেন, ‘প্রশাসনের গাফিলতিতে আজ ওই শিশুটি হারাল তার মাকে।’

এদের প্রত্যেকের কথায় যে যুক্তি রয়েছে, তা শহরে ঘুরলেই বোঝা যায়। কোর্ট মোড়ের ট্রেজারি বিল্ডিংয়ের সামনে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। টাউন স্টেশন েথকে কোর্ট মোড়ে যাওয়ার বাঁদিকের লেন দিনভর দখল করে থাকে টোটো, অটো, বাস। পুলিশ সেখানে ঠুঁটো জগন্নাথ। তাহলে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ রেখে লাভ কী, প্রশ্ন তুলেছেন সৌম্য সরকার।

হাসপাতাল মোড় হয়ে উড়ালপুলে ওঠার জন্য আলাদা লেন হলেও তা খোলা পাওয়া বড় মুশকিল। কোনও মতে হাসমি চক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও সেখানে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাক্সিক্যাব, অটোর জন্য ভোগান্তি রোজকারের। সৌমেন সিংহ রায় লিখেছেন, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, অপদার্থ ট্রাফিক পুলিশের মদতে বেপরোয়া অটো, টোটো, স্কুলবাস যে কোনও দিন, যে কোনও মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।’

Sushmita Ghosh

Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Recent Posts

বৃষ্টিতে সংকটে উত্তরের বন্যপ্রাণও শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা, ৭ জুলাই : কোথাও উত্তাল নদী পার হতে…

5 mins ago

NBMCH | সুপারস্পেশালিটি ব্লকের অন্তর্বিভাগ চালুর আগেই বিপত্তি, মেডিকেলে ভেঙে পড়ল ফলস সিলিং

রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (NBMCH) সুপারস্পেশালিটি ব্লকে এখনও অন্তর্বিভাগ চালু করতে…

20 mins ago

Euro Cup 2024 | ইউরোর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে চিন্তায় রাখল নেদারল্যান্ডসের পারফরমেন্স

সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতাঃ রোনাল্ড কোয়েম্যানের দল যেভাবে মাত্র ২০ মিনিট বাকি থাকতে খাদের কিনারে থাকা…

23 mins ago

Manoj Tigga | সমস্যায় জর্জরিত সামসিং! পরিদর্শনে এসে সার্বিক উন্নয়নের আশ্বাস সাংসদ মনোজ টিগ্গার

মেটেলিঃ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা পশ্চিম ডুয়ার্সের সামসিং। এলাকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সামসিং…

41 mins ago

Dooars | পর্যটনের দিশা, ভিলেজ ট্যুরিজমের পরিকল্পনা ডুয়ার্সে

ময়নাগুড়ি: বর্ষাকালে জঙ্গলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তা বলে পর্যটকদের আসা তো আর নিষিদ্ধ নয়। এই পরিস্থিতিতে…

41 mins ago

Karmashree Prakalpa | উপার্জনের দিশা দেখাচ্ছে কর্মশ্রী, কাজ পেলেন উত্তরবঙ্গের লক্ষাধিক জব কার্ডধারী

চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: কর্মশ্রী প্রকল্পে (Karmashree Prakalpa) উত্তরবঙ্গের আট জেলার এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে কাজ…

45 mins ago

This website uses cookies.