শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

Siliguri | বন্ধ বাড়িতে নরকঙ্কাল উদ্ধার, খুনের মামলা রুজু, নিখোঁজ মালিক

শেষ আপডেট:

শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়িতে (Siliguri) ফের হাড়হিম কাণ্ড। বন্ধ বাড়িতে মিলল মহিলার কঙ্কাল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কঙ্কালটি বাড়ির মালকিন পাসাং ডোমা শেরপার (৫৭)। তবে তা নিশ্চিত হতে কঙ্কালটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দেবীডাঙ্গার হিমকোর্স ভবন এলাকার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। কঙ্কালটি কতদিন ধরে বাড়িতে পড়ে রয়েছে, সেটাও নিশ্চিত নয়। বাড়িটিতে পাসাংয়ের পাশাপাশি থাকতেন তাঁর দ্বিতীয় স্বামী ধনঞ্জয়কুমার ভগৎ। বাড়িটিও এখন তাঁর নামে। রহস্য বেড়েছে, ধনঞ্জয়ের হদিস না মেলায়।

প্রধাননগর থানার আইসি বাসুদেব সরকার বলছেন, ‘আমরা খুনের মামলা রুজু করেই তদন্ত শুরু করেছি। ডিএনএ রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’

পাশাং নিখোঁজ হয়েছিলেন প্রায় ১০ মাস আগে। সেসময় সিকিমের টেমি থানায় মিসিং ডায়েরিও করেছিলেন প্রথম পক্ষের ছেলে অশোক লিম্বু। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও হদিস মিলছিল না পাসাংয়ের। পরে অশোক জানতে পারেন, প্রধাননগর থানা এলাকার দেবীডাঙ্গায় পাসাংয়ের একটি বাড়ি রয়েছে। সেই কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধাননগর থানাতেও একটি মিসিং ডায়েরি লেখান অশোক। যদিও বাড়ি ঠিক কোনটা, না চেনায় বিপদে পড়তে হয় তাঁকে। শেষমেশ বাড়িটি চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের ওয়ারেন্ট নিয়ে সিকিম পুলিশের সঙ্গে এখানে আসেন অশোক। প্রধাননগর থানার পুলিশও যৌথভাবে বাড়িটি চিহ্নিত করে।

বাড়িটির সামনে পৌঁছাতেই মেইন গেটে তালা দেখতে পায় পুলিশ। সেই তালা ভেঙে দ্বিতীয় তলায় ওঠার পরই বিছানায় নজরে আসে নরকঙ্কাল। গোটা ঘরটাই লন্ডভন্ড।

প্রায় ২৫ বছর ধরে মায়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না অশোকের। যদিও ওই কঙ্কালের গায়ে জড়ানো পোশাকের ধরন দেখে অশোকের অনুমান, সেটা তাঁর মায়েরই। এদিন হাড়হিম দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলেন না অশোক। কাঁদতে কাঁদতেই বারবার বলছিলেন, ‘মায়ের মৃত্যুর তদন্ত হোক।’

টেমিতে পাসাংয়ের প্রথমপক্ষের স্বামীর বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন ধনঞ্জয়। পরবর্তীতে পাসাংকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের ১৩ বছরের এক সন্তানও রয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, পাসাং নামচির একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়াতেন। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি ফোনে তাঁকে না পাওয়া যাওয়ায় অগাস্টের মাঝামাঝিতে প্রথমপক্ষের বাড়িতে চিঠি পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। বারবার চিঠি আসতে থাকায় সন্দেহ হয় অশোকের। ধনঞ্জয়ের ভাড়াবাড়িতে গিয়ে খোঁজ করে জানতে পারেন, সেখানে কেউ নেই। এরপরই থানায় মিসিং ডায়েরি করার সিদ্ধান্ত।

পুলিশের অনুমান, সন্তানকে নিয়েই উধাও হয়ে গিয়েছেন ধনঞ্জয়। যে ঘর থেকে এদিন কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তার ঠিক পাশের ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগও পেয়েছে পুলিশ। এমনকি ওই ঘরও লন্ডভন্ড। সেখানে ছড়িয়ে ধনঞ্জয়ের বিভিন্ন আইডি। তাছাড়া বাড়ির মূল দরজার বাইরে তালা লাগানো ছিল। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ওই মহিলার মৃত্যুর সময় ভেতরে কেউ ছিল? মৃত্যুর পরই কি সে বা তারা বাড়ির বাইরে তালা মেরে পালিয়ে গিয়েছে?

স্থানীয় সূত্রে খবর, ধনঞ্জয় মাসকয়েক আগেও ওই বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করেছেন। স্থানীয় পরিচিত এক ব্যক্তিকে নাকি তিনি বলেছিলেন, বাড়িটি দেখে রাখার জন্য। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ।

গোটা ঘটনায় তাজ্জব আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দা অনুজ তামাং বললেন, ‘এলাকায় অল্প অল্প গন্ধ ছড়াত। আমরা বুঝিনি, এভাবে ঘরে মানুষের দেহ পচছে। তাহলে তো আগেই পুলিশকে জানাতাম।’

প্রধাননগর থানার আইসির কথায়, ‘ওঁর শরীরে কোনও আঘাত হলেও সেটা এখন বোঝা যাবে না। তাই ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ওপরই ভরসা করতে হবে আমাদের।’

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Share post:

Popular

More like this
Related

Patiram | সবাই এখন প্রথম সারিতে! ‘ইউ’-আকৃতির আসনে বদলাচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ

পতিরাম: ক্লাসরুমে আর কোনও ব্যাকবেঞ্চার থাকবে না—এই ধারণা বাস্তবে...

Bakshirhat | বাড়ির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গৃহবধূর দেহ! ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য বক্সিরহাটে

বক্সিরহাট: সকাল থেকে বাড়িতে নেই পুত্রবধূ। তন্নতন্ন করে খোঁজার...

Migrant labor death | টাওয়ার থেকে পড়ে বিপত্তি, রাজস্থানে মৃত্যু রতুয়ার এক পরিযায়ী শ্রমিকের

সামসী: রাজস্থানে টাওয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক পরিযায়ী...

Changrabandha | মধ্যরাতে ঘরের মধ্যে ছায়ামূর্তি! আতঙ্কে ঘুম উড়ল গোটা পরিবারের

চ্যাংরাবান্ধা: এক বিধবা মহিলার ঘরে মধ্যরাতে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতী!...