ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা। কতই বা আর দূরত্ব! ৬০০ কিলোমিটারেরও কম। এই দূরত্ব পাড়ি দিতেই এখন সাধারণের নাভিশ্বাস ওঠার জো। মাথা খুঁড়লেও ট্রেনের টিকিট মিলছে না। প্লেনভাড়া পিলে চমকানোর মতোই। পাল্লা দিয়ে বাসভাড়া বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কী করলে সমস্যা মিটবে কারও জানা নেই।
বেলেঘাটার বাসিন্দা মধুছন্দা চট্টোপাধ্যায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতাতেই থাকেন। কিছুদিন আগে পরিবার নিয়ে দার্জিলিং বেড়াতে এসেছিলেন। আসার সময় সব ঠিকঠাকই ছিল। দার্জিলিং মেলে পরিবার নিয়ে এসে শিলিগুড়িতে নেমে ছোট গাড়িতে দার্জিলিংয়ে গিয়ে সেখানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে শুক্রবার সকালে শিলিগুড়িতে নামেন। এদিনই বিকেলের ট্রেনে তাঁদের কলকাতা ফেরার কথা ছিল। ওয়েটিং লিস্টে থাকা টিকিট শেষপর্যন্ত কনফার্ম না হওয়ায় তাঁদের আর ট্রেনে চেপে বসাটা হয়নি। এদিনই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়াটা জরুরি ছিল। মধুছন্দা অগত্যা পরিবার নিয়ে জংশনে বেসরকারি বাসের জায়গায় গেলেন। কিন্তু সেখানেও কোনও বাসে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। বাতানুকূল একটি বাসে টিকিট মিলল বটে। কিন্তু এক একটি টিকিটের জন্য তিন হাজার টাকা করে ভাড়া গুনতে হল। উপায় না থাকায় ওই দামেই পরিবারের সবার টিকিট কেটে মধুছন্দারা ওই বাসে চেপে বসলেন।
রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি অধিকাংশ স্কুলই এখন ছুটি থাকার কারণে পর্যটকদের চাপ উত্তরবঙ্গে অনেকটাই বেশি। কেউ ছুটছেন দার্জিলিং, সিকিম, কেউ বা আবার ডুয়ার্সের দিকে। এই পরিস্থিতিতে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। ট্রেনের টিকিট যেহেতু চার মাস আগে থেকে বুক করা যায়, তাই কোনও টিকিটই আর পড়ে নেই। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেসের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল, শতাব্দী এক্সপ্রেস বা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো দামি ট্রেনের টিকিটও মিলছে না। বিমানের টিকিট অনেকেরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। শনি ও রবিবার বাগডোগরা থেকে কলকাতাগামী বিমানের টিকিটের দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। সোমবার থেকে সেই টিকিটের দাম কিছুটা কমলেও তা খুব একটা কম নয়। ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এই টাকায় অনেকের পক্ষেই বিমানে চাপা সম্ভব হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে অনেকে বাসের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সেখানেই বা স্বস্তি কই! বেসরকারি বাস পরিষেবার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের শিলিগুড়ি-কলকাতা ভলভো পরিষেবার টিকিটের দাম হিসেবে ১৩৫৫ টাকা অনেকেরই অস্বস্তি বাড়িয়েছে। শিলিগুড়ি কলেজপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষের বক্তব্য, মানুষ কীসে চড়বে? ট্রেনের টিকিট নেই, বিমানের টিকিটের আকাশছোঁয়া দাম। এবার বাসেও লাগামছাড়া ভাড়া নিচ্ছে। যে বাসে আমি গত মাসে ৮০০ টাকায় কলকাতায় গিয়েছিলাম, বৃহস্পতিবার সেই বাসের টিকিট কাটতে গিয়ে শুনলাম ভাড়া বেড়ে ১৫০০ টাকা হয়েছে।
এদিন জংশনে বিভিন্ন বাসের বুকিং কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে বেশ ভিড়। প্রত্যেকেই কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সুযোগ বুঝে বাসমালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে দুই, আড়াই বা তিন হাজার টাকা ভাড়া চাইছিলেন। শিলিগুড়ি বাস ওনার্স বুকিং এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েনের সভাপতি সন্তোষ সাহা অবশ্য বললেন, সিংহভাগ বাসমালিকই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে বাস বুকিংয়ে দাযিত্ব তাদের দিয়ে দেন। যার ফলে বাসের ভাড়া কখনও ৮০০ টাকা হয়, আবার কখনও বেড়ে তিন-চার হাজার টাকাও হয়ে যায়। তবে এটা ঠিকই যে, ইদানীং ভাড়া অনেকটাই বেড়েছে। সন্তোষ যাই বলুন না কেন, যাত্রীদের ভোগান্তি যে এখনই মেটার নয় তা তাঁর কথাতেই পরিষ্কার।