তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনও পরিত্যক্ত বাড়ি। সামনের প্ল্যাটফর্ম এবং রেললাইনে দিনভর চলছে জুয়া কিংবা নেশার আসর। গাঁজা কিংবা মাদকের সুখটানে ব্যস্ত ‘বিপথে যাওয়া একটা প্রজন্ম’ রীতিমতো কটূক্তি করছে মহিলাদের। ঘটনাটি রবীন্দ্রনাথ, বাঘা যতীনের স্মৃতিধন্য শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের (Siliguri Town Railway Station)।
ভবিয্যৎ ছিল। প্রয়োজনে দৃষ্টান্ত হতে পারত যে স্টেশন, সেই স্টেশনের এখন কঙ্কালসার অবস্থা। দিন-দিন নেশাগ্রস্তদের অত্যাচারে আরও শোচনীয় অবস্থা উত্তরবঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহিলা পরিচালিত এই স্টেশনটি। কাজ করতে গিয়ে রোজ ভয় পাচ্ছেন মহিলা কর্মীরা। নিস্তার নেই সাধারণেরও। মূলত যে সমস্ত মহিলারা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটতে স্টেশনটিতে পা রাখছেন, তাঁরা আর দ্বিতীয়বার আসতে চাইছেন না। কারণ দিনেদুপুরেই স্টেশন হয়ে উঠছে ‘অনিরাপদ’।
কথা হচ্ছিল এক মহিলা রেলকর্মীর সঙ্গে। আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘কয়েকদিন ধরে এধরনের অত্যাচার আরও বেড়েছে। অনেক যাত্রী টিকিট কাটতে এসে কটূক্তির শিকার হয়ে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। আমরা বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্তাদের জানাব বলে ঠিক করেছি।’
উত্তরবঙ্গের একমাত্র মহিলা পরিচালিত স্টেশনে রেল পুলিশের নজরদারি এত কম কেন, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বক্তব্য, ‘শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে রেল এবং পুলিশ কমিশনারকে আগে একাধিকবার জানানো হয়েছে। স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে ফের একবার রেল ও পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হব।’
ইতিহাস বিজড়িত শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনকে ২০১৯ সালে মডেল স্টেশন হিসাবে ঘোষণা করেছিল রেলমন্ত্রক। খাতায়-কলমে মডেল স্টেশন ঘোষণা হলেও বাস্তবে চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। পরিকাঠামো দূর অস্ত, স্টেশনটিতে ট্রেনের সেই অর্থে স্টপ না থাকায় দিনভর নেশাগ্রস্তদের আড্ডা লেগেই থাকছে। চলছে ড্রাগসের কারবারও। আর সেইসঙ্গে কটূক্তি।
দিঘা (Digha) ঘুরতে যাওয়ার জন্য রবিবার দুপুরে ট্রেনের টিকিট কাটতে এসেছিলেন বছর পঞ্চাশের মধুমিতা দত্ত। টিকিট কাউন্টারের সামনে যেতেই তাঁকে দেখে কটূক্তি করতে শুরু করে কয়েকজন নেশাগ্রস্ত তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি টিকিট কাউন্টারে থাকা দুজন মহিলা কর্মীকে জানান মধুমিতা। প্রত্যুত্তরে রেলকর্মীরা বলেন, ‘এরকমই চলছে। আমাদেরও এমন কটূক্তি শুনতে হয় রোজ।’ এরপরই টিকিট কাউন্টারেরে সামনে রেল পুলিশের নজরদারি না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওই মহিলা।
শহরের ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটির এমন দশায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শহরবাসী। পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু যেমন বলছেন, ‘স্টেশনটিতে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। নজরদারি বাড়িয়ে অবিলম্বে স্টেশনটির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
টাউন স্টেশনের সুরক্ষার ব্যাপারে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মার কথায়, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ওই স্টেশনে নজরদারি বাড়ানোর জন্য আরপিএফ-কে বলা হবে।’