রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

Siliguri | শহরের জোড়া নদী ডাম্পিং জোন, সংস্কারেও বদলায়নি জোড়াপানি-ফুলেশ্বরী

শেষ আপডেট:

ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : কিছুদিন আগেই নদীতে ড্রেজার নামিয়ে নদী সংস্কার করেছিল সেচ দপ্তর। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই শিলিগুড়ি শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি নদীর সেই হতশ্রী চেহারা ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ঘোগোমালি বাজারের কাছে সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোড়াপানি নদীতে এখন এমন জঞ্জাল জমেছে যে জল আর সেখানে চোখে পড়ছে না। একই অবস্থা ফুলেশ্বরী নদীরও। নদী সংস্কারের পরে দেখভালের অভাবে সেগুলির দিকে এখন তাকানো যায় না।

শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এই দুই নদীর ওপর একাধিক সেতু রয়েছে। ওই সেতুগুলির দু’পাশে তারজালির বেড়া দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ আবর্জনা নদীতে ফেলতে না পারে। কিন্তু এতেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। দুই নদীতে জমেছে জঞ্জালের স্তূপ। সেতুর ওপর যে অংশে জাল নেই সেখান দিয়ে অনেকে আবর্জনা ফেলছে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় বড় তারজালির বেড়া সেতুর ওপর বসানো হয়েছে। যাতে কোনওভাবেই কেউ নদীতে আবর্জনা ফেলতে না পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েকটি জায়গায় এর মধ্যে দিয়ে অনেকে আবর্জনা ফেলছে বলে খবর পেয়েছি।’

শিলিগুড়ি শহরের সুভাষপল্লি, কলেজপাড়া-রবীন্দ্রনগরের সংযোগকারী এলাকায়, রবীন্দ্রনগর, ঘোগোমালি এলাকার ওপর দিয়ে কোথাও বয়ে চলেছে ফুলেশ্বরী নদী, আবার কোথাও জোড়াপানি নদী। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই এখন নদীর নাব্যতা কমে জঞ্জালের স্তূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিগত কয়েক মাস আগে নদীগুলির সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল সেচ দপ্তর। সেচ দপ্তর সেই মাটি নদীর পাড়ে রাখার পর সেখান থেকে মাটি ও জঞ্জাল গাড়িতে তুলে তা ডাম্পিং গ্রাউন্ড কিংবা নীচু কোনও জায়গায় গিয়ে ফেলেছিল পুরনিগম। কিন্তু এতসবের পরেও নদীতে আবর্জনা কোনও অংশে কমেনি। ঘোগোমালি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রিপন সাহার বক্তব্য, ‘এটা ঠিক যে আমাদের ব্যবসায়ীরা ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কিন্তু এখানে যে আবর্জনা জমে রয়েছে তা শুধু ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের নয়, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও আবর্জনা ভেসে এসে এখানে জড়ো হয়েছে।’ রবীন্দ্রনগর রথখোলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত কুণ্ডুর কথায়, ‘বাজারে বেশ কিছু ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকে সেখানে আবর্জনা ফেলছেন না। তবে এইখানে ফুলেশ্বরী নদী দুই দিক দিয়ে দখল হয়ে গিয়েছে অনেকটা। এই বিষয়টা প্রশাসনের কর্তারা নিশ্চয়ই দেখবেন।’

যদিও জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পরিষদের সদস্য মানিক দে-র বক্তব্য, ‘শহরের বাজারগুলির ভিতর বেশ কয়েকটি জায়গায় ডাস্টবিন দেওয়া হচ্ছে। সেখানে জঞ্জাল ভরে গেলে বাজারের কাছে থাকা ট্রেলারে গিয়ে সেই জঞ্জাল ফেলা হবে। এরপর দিনে দুইবার করে পুরনিগমের তরফে গিয়ে সেই জঞ্জাল সেখান থেকে সংগ্রহ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হবে।’ মেয়র পারিষদের ক্ষোভ, ‘এতসবের পরেও অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীরা এসবের তোয়াক্কা করছে না। নদীতে আবর্জনা ফেললে এরপর থেকে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব।’

পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেন, ‘শিলিগুড়ির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির যাচ্ছেতাই অবস্থা। কিছু জায়গায় নদীর জল পুরো ফেনা হয়ে গিয়েছে। তাই শুধু নদী পরিষ্কার করা কিংবা ঘাট বাঁধালেই হবে না, মানুষের সচেতনতারও প্রয়োজন। আবার শাসনেরও প্রয়োজন।’

এদিকে সম্প্রতি জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে বসিরহাট পুরসভা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন পুরনিগমের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তিন কর্মী। দুইদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে এদিন ওই কর্মীরা রামকিংকর হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা সকলকে শোনান। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে নির্মল সাথীদের সঙ্গে মাইক্রোফোন, ছোট সাউন্ড বক্স দেওয়া হবে। এই মাইক্রোফোন দিয়ে নির্মল সাথীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষকে জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে সচেতন করবেন।

Web Desk
Web Deskhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad is leading online news publisher in West Bengal. Every single article post checked after verify and fact checking by our own staff.

Share post:

Popular

More like this
Related

Falakata | ফালাকাটায় রহস্যময় কুয়োর ধ্বংসাবশেষের হদিস! কী রয়েছে এর ভেতরে?

ভাস্কর শর্মা,ফালাকাটা: ফালাকাটা পোস্ট অফিস মাঠে কুয়োর ধ্বংসাবশেষ ঘিরে...

Kaliyaganj | বেতন তোলেন নিয়মিত, করণিকের দায়িত্বে থাকলেও স্কুলে আসেন না উপপুরপ্রধান!

কুশমণ্ডি ও কালিয়াগঞ্জ: একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে প্রশাসনিক পদ, তার...

Teacher | মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, ফের পরীক্ষায় বসবেন অনামিকা

রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ : দেড় বছর শিক্ষকতার চাকরি করতে...