‘আরে ছো ছো, কেয়া শরম কি বাত।’ মুখ্যমন্ত্রীই গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন। আর্থিক কেলেঙ্কারির কালিমা লেপ্টে গেল তাঁর গায়ে। অথচ এই অরবিন্দ কেজরিওয়ালই কি না দেশ থেকে দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে বিদায় করার সংকল্প সার্থক করতে সরকারি চাকরি ছেড়েছিলেন। আম আদমি পার্টির (আপ) প্রতীক ‘ঝাড়ু’ যেন সব অর্থে তাঁর শপথের ইঙ্গিতবাহী ছিল। ‘ভ্রষ্টাচার’ বিরোধী জেহাদের সেই অন্যতম মুখটাকে বৃহস্পতিবার রাতে ইডি’র গাড়িতে দেখেই কষ্ট হল।
পরক্ষণেই মনে হল, সত্যিই কি ক্ষমতাজনিত পাপে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল? নাকি দিল্লির মাটিতে সর্বভারতীয় শাসকদলের বারবার পা রাখার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার খেসারত দিতে হল তাঁকে। তিনি যেন দিল্লির মাটিকে ক্রমশ আমআদমির দুর্জয় ঘাঁটি করে তুলছিলেন। দিল্লির পর পঞ্জাবেও জমি শক্ত করে ফেলেছেন। ক্ষমতার এতদিনের কান্ডারিরা তাতে সিঁদুরে মেঘ তো দেখবেনই।
কোথাকার কে হঠাৎ নির্বাচনি লড়াইয়ে এসে রাজনীতির ‘হুজ হু’দের ঘোল খাইয়ে ছাড়ছেন। পঞ্জাবের পর আবার না কোথাও অঘটন ঘটে। এমনকি, কেজরির নজরে যখন সাধের, গর্বের গুজরাটও রয়েছে। না, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সাফাই গাইছি না। অপরাধ যদি সত্যি হয়, তিনি গ্রেপ্তার হবেন। কড়া শাস্তি হবে। ক্ষমতায় থেকে অসৎ উপায়ে তার ব্যবহার হয়ে থাকলে বিহিত হওয়া উচিত নিঃসন্দেহে।
মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের লজ্জা। যে কথাটি প্রতিবেদনের শুরুতে বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী পদের গরিমা মুহূর্তে ধূলিসাৎ। যদিও কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের পর বিজেপি নেতাদের পরিচিত শব্দ কানে বাজছে, ‘ক্রোনোলজি সমঝ লিজিয়ে।’ নয়বার সমন এড়িয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেউ কেউ অনেক কম সমন এড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। যেমন অনুব্রত মণ্ডল। তাহলে কেজরির জন্য বেশি সময় কেন? নির্বাচনের আগ মুহূর্তকে বেছে নেওয়া হবে বলে?
জানি, বিজেপি নেতারা বলবেন, এ তো ইডি’র কাজ। স্বাধীন তদন্ত সংস্থা কখন কী করবে, তার নিয়ন্ত্রণ তো শাসকদল বা সরকারের হাতে নেই। ঠিক কথা। কিন্তু কথাটা কতটা সত্যি, সেই সন্দেহ বাড়িয়ে দিলেন বিজেপির বঙ্গেশ্বর সুকান্ত মজুমদার। আজকাল আলটপকা মন্তব্যে হাওয়া গরম করতে অভ্যস্ত অধ্যাপকমশাই বলে ফেললেন, ‘যতই করো কান্নাকাটি, মাফলারের পর হাওয়াই চটি।’ সমঝদারোঁ কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়।
তিনি জানলেন কী করে যে, ইডি’র পরের টার্গেট হাওয়াই চটি। তিনি ইডি-কে সেই নির্দেশ দিয়েছেন না ইডি তাঁকে বা তাঁর দলকে আগাম জানিয়ে পদক্ষেপ করছে? ক্রোনোলজির কথায় আসি। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের সমসাময়িক আরও কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কংগ্রেসের ভাঁড়ার শূন্য করে দিয়েছে আয়কর দপ্তর। মোটা অঙ্ক দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জরিমানা বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার লেনদেন বন্ধ।
কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টে অসংগতির অভিযোগটি কিন্তু নতুন নয়। ৩০ বছর আগের। সীতারাম কেশরী কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন। অভিযোগটির সারবত্তা নেই বলছি না। কিন্তু পাক্কা তিন দশক পরে ঠিক লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপ কি সেই ক্রোনোলজির কারণে? পরিস্থিতি এমন যে, রাহুল গান্ধিকে আক্ষেপ করতে হচ্ছে, ‘ভোটের আগে প্রচারের জন্য আমাদের হাতে ২ টাকাও নেই।’ কংগ্রেসকে আর্থিকভাবে দেউলিয়া করে দেওয়া কি ক্রোনোলজির মধ্যে পড়ে?
পশ্চিমবঙ্গে ভোট ঘোষণার পর ইডি’র সক্রিয়তা বাড়ল। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপের পর আরেক মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত সিনহার বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়ে গেল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলিও নতুন নয়। শুধু তল্লাশির সময় বেছে নেওয়া দেখে ক্রোনোলজির সন্দেহ বাড়তে থাকে। ফিরে আসি কেজরিওয়াল প্রসঙ্গে। এমন নয় যে, আগে কখনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হননি। লালুপ্রসাদ যাদব, জয়ললিতা, মধু কোড়া, চন্দ্রবাবু নাইডু, এই সেদিন হেমন্ত সোরেন। যদিও গ্রেপ্তারের সময় এঁদের অনেকে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না বা গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে পদত্যাগ করেছিলেন।
সে যাই হোক, ওই পদে একবার যাঁরা বসেছেন, তাঁরা কলঙ্কিত হলে এই ধারণাটা পোক্ত হয় যে, ক্ষমতা মানেই পাপে জড়িয়ে পড়া। হেমন্তের বাবা শিবু সোরেন ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেতা। তাঁর আত্মগোপন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার গল্পে আমরা কিশোর বয়সে রোমাঞ্চিত হতাম। আপনা থেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হত। সেই শিবু কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী হয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে জেল খাটলেন। ক্ষমতার পাপ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল ঝাড়খণ্ডী বিদ্রোহের শীর্ষ নেতাকে।
ক্ষমতাসীন হলেই যেন পাপ-আগুনের দিকে পতঙ্গের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যাওয়া নিয়ম হয়ে উঠেছে। আখের গোছানোর জন্যই রাজনীতিতে যোগ, দলবদল, পদ পাওয়ার লোভে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, এমনকি হিংসায় জড়িত হওয়ার ঝোঁক বাড়ছে। অনেকের হয়তো মনে আছে, রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন কোচবিহার থেকে নির্বাচিত সন্তোষ রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওয়াংচু কমিশন তদন্ত করে।
ত্রিদিব চৌধুরী, ননী ভট্টাচার্যদের মতো প্রবাদপ্রতিম নেতাদের হাতে তৈরি আরএসপির টিকিটে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ পীযূষ তিরকি হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায়কে জেলের ঘানি টানতে হয়েছিল বাম আমলে সমবায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে। সব অভিযোগ প্রমাণ হয়নি ঠিকই। কিন্তু দেশজুড়ে ক্ষমতাসীন হয়ে নানা অন্যায়ে অভিযুক্ত হওয়ার তালিকাটা দীর্ঘই।
তারপর যখন ভোটের আগে ক্রোনোলজির সন্দেহ এসে উপস্থিত হয়, তখন মনে হয়, উদযাপন নয়, গণতন্ত্রের অন্তর্জলি যাত্রার আয়োজন চলছে দেশজুড়ে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দিলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। রেখার মনোনয়নে…
গয়েরকাটা: ফের গয়েরকাটার দুটি মন্দিরে চুরি। গয়েরকাটা বাজারে অবস্থিত রাধা গোবিন্দ মন্দির ও মা ভুবনেশ্বরী…
তুফানগঞ্জ: একটি মালভোগ কলার ছড়ায় ৪২টি কলা(Banana) ধরেছে। এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছে কিনা সন্দেহ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরেই স্বস্তির আবহাওয়া বঙ্গে (West bengal weather update)। উত্তরবঙ্গে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটের মাঝে ফের রদবদল। সরানো হল বহরমপুরের আইসিকে (Baharampur IC)। আইসির…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ইদের দিন নতুন ছবি ‘সিকন্দর’র (Sikandar) কথা ঘোষণা করেছিলেন সলমন খান…
This website uses cookies.