বিশ্বজিৎ সাহা, মাথাভাঙ্গা: বাপের বাড়ির কেউ প্রতিমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু বছর চারেক আগে বিয়ে হয়ে আসেন মাথাভাঙ্গার এমন এক পরিবারে যার সদস্যদের প্রায় সবাই এই কাজে যুক্ত। তখন থেকে এই কাজের প্রতি আগ্রহের সূত্রপাত। পরিবারের সদস্যদের তরফে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও খামতি ছিল না। সেই শুরু। এবারেও পরিবারের সকলের সঙ্গে এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত স্বপ্না পাল।
মাথাভাঙ্গা শীতলকুচি সড়কের ধারে এলংমারিতে কোচবিহার জেলার প্রচুর প্রতিমা তৈরি হয় প্রখ্যাত প্রতিমাশিল্পী নির্মল পালের কারখানায়। চার বছর আগে নির্মল পালের ভাইপো জগন্নাথ পালের সঙ্গে বিয়ে হয় অসমের বাসিন্দা স্বপ্নার। তাঁর কথায়, ‘বিয়ের পর থেকেই দেখছি বিভিন্ন পুজোয় বাড়ি ও বাড়ি সংলগ্ন কারখানায় প্রচুর প্রতিমা তৈরি হয়। আমার শাশুড়ি, স্বামী, দেওর, কাকাশ্বশুর, কাকিশাশুড়ি সহ সকলেই সংসারের অন্যান্য কাজ সামলে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগান। তাঁদের দেখে আমিও এই কাজে উৎসাহ পাই।’ এরপর তাঁর ইচ্ছার কথা শাশুড়ি দুলু পালকে জানালে তিনি স্বপ্নাকে একাজের জন্য উৎসাহ দেন। শাশুড়ির থেকে পাওয়া হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ থেকেই প্রতিমা তৈরির শুরু।
স্বপ্না জানান, এবছর তাঁদের কারখানায় ৫৮টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। তবে বেশ কিছুদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতে আর মাত্র এক সপ্তাহ থাকায় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আটজন কারিগর প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করেন কারখানায়। স্বপ্নার স্বামী জগন্নাথ পাল কারখানার সমস্ত প্রতিমার চক্ষুদান করেন। প্রতিমার চোখ আঁকা স্বামীর কাছ থেকে শিখে নেওয়া পরবর্তীতে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য বলে স্বপ্না জানান।
প্রতিমাশিল্পী হিসেবে মহকুমায় যথেষ্ট নামডাক রয়েছে স্বপ্নার শাশুড়ি দুলু পালের। স্বপ্নার বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘প্রতিমা তৈরির ব্যাপারে ওঁর যা আগ্রহ দেখছি, এভাবে চললে আগামীদিনে দক্ষ প্রতিমাশিল্পী হিসেবে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’