সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: যাঁর আমলে জমি নেওয়া হয়েছিল সেই অশোক ভট্টাচার্য বলছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে জানিয়েছিলেন, শিলিগুড়ির (Siliguri) হিমাঞ্চল বিহারে তিনি আর স্কুল তৈরিতে আগ্রহী নন। এসজেডিএ-র শেষ বোর্ডের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ওই স্কুলের জন্য নেওয়া জমির লিজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামেই রয়েছে। এসজেডিএ-র দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের কথায় মাটিগাড়ার হিমাঞ্চল বিহারে টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ক্যাপ্টেনের স্কুল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। প্রশ্ন উঠছে, ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে শিল্পপতি হয়ে ওঠা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্কুলের জমি নিয়ে এসজেডিএ-র বর্তমান অবস্থান কী? এসজেডিএ-র কার্যনির্বাহী আধিকারিক অর্চনা ওয়াংখেড়েকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তরফেও এর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শালবনিতে ইস্পাত কারখানা তৈরির কথা ঘোষণার পর রাজ্য রাজনীতিতে তা নিয়ে কম চর্চা হয়নি। কবে সেই কারখানা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কেননা, শিলিগুড়ির হিমাঞ্চল বিহারে ঢাকঢোল পিটিয়ে যে স্কুল করার কথা সৌরভ বলেছিলেন, সেই প্রকল্প বর্তমানে বিশবাঁও জলে। ছয় বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গোটা এলাকা আগাছায় ভরেছে।
বাম আমলে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) (SJDA) তৎকালীন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য হিমাঞ্চল বিহারে সৌরভকে স্কুল করার জন্য জায়গাটি পাইয়ে দিয়েছিলেন। ৩ একরের কিছু বেশি ওই জমিতে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর কাজও শুরু হয়। বেশ কয়েকবার সৌরভ এসে স্কুলের কাজ দেখে গিয়েছিলেন বলেও খবর। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ করে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের চারতলার ঢালাই হয়ে রয়েছে। ইটের গাঁথনি অনেকটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যত পরিত্যক্ত থাকা ওই জায়গা এখন নেশার আসরে পরিণত হয়ে রয়েছে। অশোকের কথায়, ‘স্কুলের কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সৌরভের সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু স্কুল সে করবে না বলে সেই সময় জানিয়েছিল। পরে কী হয়েছে তা নিয়ে আর কথা হয়নি।’
২০১৯ সালে স্কুল তৈরির প্রকল্পে রাতপাহারাদারের কাজ করতেন পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথর কলোনির বাসিন্দা মণি বর্মন। কিন্তু প্রায় এক বছর দেখভালের কাজ করেও টাকা পাননি বলে মণির অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘ঠিকদার সংস্থা কাজ বন্ধ করে পরবর্তীতে গেট তালা দিয়ে চলে যায়। কাজের টাকা চেয়েও আর পাইনি।’
প্রকল্প না করায় রাজ্য সরকার অনেক জমি এর আগে শিল্পপতিদের কাছ থেকে ফেরত নিয়েছে। সেখানে সৌরভের থেকে কি জমিটি ফেরত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি এখনও পর্যন্ত জমিটি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে লিজে রয়েছে। তবে স্কুল নিয়ে তাঁর কী পরিকল্পনা রয়েছে তা জানা নেই।’
সৌরভের প্রকল্প নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। বিজেপির বিধানসভায় পরিষদীয় দলের মুখ্যসচেতক শংকর ঘোষ বলেন, ‘সৌরভের স্কুল বা কারখানা কিছুই বাস্তবে দেখা যায়নি। এবিষয়ে সৌরভের নিজের ভাবা দরকার।’
পাথরঘাটার মানুষের মধ্যে তারকা ক্রিকেটারের স্কুল নিয়ে একসময় বাড়তি উন্মাদনা ছিল। পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা নারায়ণ বর্মনের বক্তব্য, ‘স্কুল ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন। পরবর্তীতে দুই-একবার কাজ দেখতেও এসেছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি থেকে কাজ বন্ধ হওয়ায় গোটা জায়গাটি বর্তমানে সমাজবিরোধীদের নেশার জায়গা হয়েছে।’
হিমাঞ্চল বিহারের সৌরভের ওই স্কুলের জায়গার পাশে একটি বেসরকারি সংস্থা বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তা চালু হয়ে গিয়েছে। হিমাঞ্চল বিহার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার কমিটির অন্যতম সদস্য বিভূতিকুমার ঠাকুর বলেন, ‘সৌরভের স্কুলটি হলে এখানে আরও জমজমাট হত।’