জলপাইগুড়ি: ভারত-পাকিস্থান সীমান্তের পর এবার ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তেও স্মার্ট ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু করল কেন্দ্রীয় পূর্ত মন্ত্রক। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই স্মার্ট ফেন্সিং চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ রুখতে অপরিহার্য বলে মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই জোর তৎপরতায় জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ির ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক স্মার্ট ফেন্সিং বসানো হচ্ছে। আগেকার লোহা ও কাঁটাতারের বেড়ার চেয়েও মজবুত এই ফেন্সিংয়ের সঙ্গে থার্মাল ক্যামেরা সহ একাধিক উন্নতর পরিষেবা থাকবে। জেলার সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার দেশের একাধিক আন্তর্জাতিক সীমান্তে এখন স্মার্ট ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু করেছে। অত্যাধুনিক এই ফেন্সিং মাল্টিপারপাস উদ্দেশ্য সাধন করে। এই রাজ্যেও বাংলাদেশ সীমান্তে স্মার্ট ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।’
দক্ষিণ বেরুবাড়ির নাওতারি দেবোত্তর পড়ানিগ্রাম, কাজলদিঘি, বড়শশী ও চিলাহাটি গ্রাম চারটি ‘অ্যাডভার্স পজেশন’ হিসেবেই পরিচিত। স্বাধীনতার পর ভারতের মূল ভূখণ্ডে এই গ্রাম ৪টি থাকলেও ভারতীয় গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। ছিটমহল বিনিময়ের সঙ্গে এই গ্রামগুলি ভারতীয় মানচিত্রে ঠাঁই পায়। আজও সীমান্তের এই ৪টি ভারতীয় গ্রামের ১৬ কিমি এলাকায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই গ্রামগুলির নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বেড়া দেওয়ার দাবি তুলেছেন সীমান্তবাসী সুশীল রায় ও আনন্দ অধিকারীর মতো আরও অনেকেই।
স্মার্ট ফেন্সিং আপাতত দক্ষিণ বেরুবাড়িতে পুরোনো কাঁটাতারের বেড়া তুলে তার পরিবর্তে বসানো হচ্ছে। আগে ১০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে সীমান্ত রাস্তা ও বেড়া দেওয়া হত। এবার দূরত্ব কমিয়ে ৫০ ফুট করা হয়েছে। দক্ষিণ বেরুবাড়ির প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সারদাপ্রসাদ দাস বলেন, ‘স্মার্ট ফেন্সিং অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিতে ভরপুর। কিন্তু পুরোনো কাঁটাতারের বেড়া উঠিয়ে নতুন স্মার্ট ফেন্সিং বসানো হচ্ছে হোক। কিন্তু দক্ষিণ বেরুবাড়ির উন্মুক্ত ১৬ কিমি সীমান্তেও দ্রুত বেড়া দেওয়া প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে।’ ২০১৮ সালে ভারত সরকারের তরফে পাকিস্তান সীমান্তে এই ধরনের স্মার্ট ফেন্সিং বসানো হয়েছিল পাইলট প্রকল্প হিসেবে। সেই পরিকল্পনা সফল হওয়ায় এবার বাংলাদেশ সীমান্তেও স্মার্ট ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু করল কেন্দ্র সরকার।
স্মার্ট ফেন্সিং একদিকে যেমন অনেক উঁচু তেমনি ফেন্সিংয়ের ঘনত্ব এত বেশি যে একটা টিকটিকি গলে যেতে পারবে না। তাছাড়া স্মার্ট ফেন্সিংয়ের সঙ্গে সোলার এলইডি লাইট, ওয়েদার সেন্সর, কম্পনের অনুভূতি বোঝার জন্য সেন্সর, রাতের অন্ধকারে ছবি তোলার জন্য থার্মাল ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা থাকছে। আগের মতো এই স্মার্ট ফেন্সিং সহজে কাটা যাবে না। কেউ ফেন্সিং কাটতে গেলে কিংবা অনধিকার প্রবেশ করার চেষ্টা করলেই সেন্সর থেকে বার্তা বিএসএফের কাছে চলে যাবে। দক্ষিণ বেরুবাড়ির পঞ্চায়েত উপপ্রধান অন্নকান্ত দাস বলেন, ‘দইখাতার দিকে স্মার্ট ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে অ্যাডভার্স ৪টি গ্রামের উন্মুক্ত সীমান্তে যত দ্রুত সম্ভব ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু করা দরকার। বিএসএফ মোতায়েন থাকলেও কে কখন কীভাবে অনুপ্রবেশ করবে তা বলা যায় না।’