সুভাষ বর্মন, ফালাকাটা: ডাঙ্গাপাড়ার গৃহবধূ মহুয়া কর সোমবার সকাল হতেই বোতল, ড্রাম সহ জল নিতে হাজির। এদিন রোদ উঠতেই শিশাগোড়ের সোলার পাম্প চলে। তাই মহুয়ার মতো আশপাশের নানা এলাকার গৃহবধূরা জল নিতে সোলার পাম্পের সামনে ভিড় জমান। কারণ, গত পাঁচদিন ধরে রাইচেঙ্গার পিএইচই-র পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ। মহুয়ার কথায়, ‘প্রায় এক কিমি দূরে গিয়ে এদিন সোলার পাম্প থেকে জল নিয়ে আসি। অথচ পিএইচই-র জল থাকলে বাড়ির সামনে থেকে নিতে পারতাম।’ পাম্প বিকল হওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পরিস্রুত জল পাচ্ছেন না। এতদিনেও কেন পাম্প ঠিক করা হচ্ছে না তা নিয়ে এলাকার মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এদিন শুধু শিশাগোড়েই নয়, যেসব জায়গায় সোলার পাম্প আছে সেখানেই অনেক মানুষ জল নেওয়ার জন্য লাইন দেন। ফালাকাটার বিডিও অনীক রায়ের কথায়, ‘পিএইচই-র সঙ্গে কথা বলছি। দ্রুত যাতে পাম্প ঠিক করে পরিষেবা স্বাভাবিক হয় সেই চেষ্টা চলছে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে পিএইচই-র পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ। সেদিন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। এদিকে বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশের জন্য সোলার পাম্প শনিবার পর্যন্ত অচল ছিল। রোদ না ওঠায় সোলার পাম্পের প্যানেল চার্জ হয়নি। তাই ওই ক’দিন কেউ কেউ জারের জল কিনে খেয়েছেন। ফালাকাটার শিশাগোড়, বাবুপাড়া, বংশীধরপুর, বালুরঘাট ও কালীপুর এলাকায় কয়েকটি সোলার পাম্প আছে। এরমধ্যে বালুরঘাটের পাম্পটি অনেকদিন ধরে বন্ধ। স্থানীয় অনন্ত দাস জানান, এখানকার সোলার পাম্প কয়েক মাস ধরে খারাপ। এখন পিএইচই-র জলও বন্ধ। বাধ্য হয়ে বাড়ির নলকূপের জল খেতে হচ্ছে। তবে বাকি পাম্পগুলি থেকে এতদিন স্থানীয় ১০০-২০০ বাসিন্দা জল সংগ্রহ করতেন। বাকি বাসিন্দারা রোজ সকালে নিয়মিত পিএইচই-র জল নিতেন। কিন্তু টানা পাঁচদিন পিএইচই-র জল না থাকায় এখন সোলার পাম্পই এলাকাবাসীর ভরসা। পুজোর আগে পানীয় জলের এমন সংকট কালীপুরের ললিতা রায়, আদরি বালো, লক্ষ্মী দাসদের মতো গৃহবধূরা মেনে নিতে পারছেন না। পিএইচই-র জল দ্রুত চালু না হলে পাত্র নিয়ে রাস্তা অবরোধ করবেন বলেও তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পিএইচই-র রাইচেঙ্গার রিজার্ভারের মাধ্যমে বাবুরহাট, আসাম মোড়, রাইচেঙ্গা, কালীপুর বাঁধের পাড়, উত্তর কালীপুর, দক্ষিণ কালীপুর, বংশীধরপুর ও শিশাগোড় সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল পরিষেবা দেওয়া হয়। রাইচেঙ্গার পাম্প অপারেটর কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘পাম্প বিকল হওয়ায় জল বন্ধ আছে। বিষয়টি এজেন্সিকে বারবার জানানো হয়েছে।’ কয়েক মাস আগেও এখানকার জলের পাইপলাইন ভেঙে পরিষেবা বন্ধ ছিল। কিন্তু তখন দু-তিনদিনের মধ্যে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। নয়ন সরকার নামে এক তরুণের বক্তব্য, ‘দু’দিন ধরে চার কিমি দূরে পলাশবাড়ি গিয়ে বাইকে করে জল নিয়ে আসছি। এতদিন পিএইচই-র জল বন্ধ থাকা ঠিক নয়।’ এদিকে পিএইচই-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজ মণ্ডলকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।