অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: গত দু’বছরে ঠিক করে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাস লাগানো হয়নি জঙ্গলে। পর্যাপ্ত ঘাসের অভাবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বন্যজন্তুর হানা দেখা গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা টাইগার রিজার্ভে বহুবার এই সমস্যা নজরে এসেছে। এই অবস্থায় জঙ্গলে খাদ্য ভাণ্ডার বাড়িয়ে বন্যজন্তুদের জঙ্গলের ভিতর থেকে বাইরে বের হওয়া আটকানোর পরিকল্পনা বন দপ্তরের। সেজন্য বক্সা টাইগার রিজার্ভেই (Buxa) এবছর ৫২ হেক্টর জমিতে ঘাস লাগানো হবে। এরপর ফলের গাছও লাগানো হবে বলে খবর। ভারী বর্ষা এলেই এই ঘাস লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে খবর। এবিষয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভের ডিএফডি (পশ্চিম) দেবাশিস শর্মার বক্তব্য, ‘বর্তমানে ঘাস লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। ঘাসের চারা তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। বর্ষার সময় বিভিন্ন জায়গায় ওই ঘাস লাগানো হবে।’
বন দপ্তর সূত্রে খবর, বিগত দু’বছরে অনেকটাই কম ঘাস লাগানো হয়েছিল। বিশেষ করে কিছু রেঞ্জ এলাকায় তো লাগানোই হয়নি। জঙ্গলে ঘাসের অভাবে অনেক বন্যজন্ত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা নজরে এসেছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এমনকি এই বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক সভা করতে এসেও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলে ঘাস লাগানো যে হয়নি সেটা বলতে শোনা যায় তাঁকেও। এই অবস্থায় এবছরই ঘাস লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বক্সা টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবছর সব থেকে বেশি লাগানো হবে চেপটি ঘাস। এছাড়াও ঢাড্ডা, মালসা, পুরন্ডি প্রজাতির ঘাসও প্রচুর পরিমাণে লাগানো হবে বক্সা টাইগার রিজার্ভে। কোন এলাকায় কী পরিমাণ ঘাস লাগানো হবে সেটাও ইতিমধ্যেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। জুন ও জুলাই- এই দুই মাস ধরে ঘাস লাগানো হবে। বক্সার জঙ্গলে বেশ কয়েকটি জলধারা ও নদী থাকায় জলের সমস্যা এখনও খুব বেশি নজরে আসেনি। তবে এবার ঘাসের সমস্যা নজরে এসেছে।
বক্সার জঙ্গলে থাকা হাতি, বাইসন, হরিণ সহ অন্য বিভিন্ন জন্তুর খাবারের জন্য শুধু ঘাসই নয়, বিভিন্ন জায়গায় ফলের গাছও লাগানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাঁঠাল, আমলকী সহ খয়ের গাছও লাগানো হবে বিভিন্ন এলাকায়। তবে আগে ঘাস লাগানোর কাজ শেষ করা হবে। এরপর জোর দেওয়া হবে ফলের গাছ সহ অন্য গাছ লাগাতে। বনকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বক্সার জঙ্গলে বিভিন্ন জন্তুর সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে যেমন হাতি বাড়ছে তেমনই বাড়ছে বাইসন। অন্যদিকে হরিণও বাড়ছে। বাইরে থেকেও বিভিন্ন সময় জঙ্গলে হরিণ ছাড়া হয়েছে। জঙ্গলের তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যের জোগান ঠিক রাখতেই বন দপ্তর ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্ষায় বিভিন্ন গাছ ও ঘাস লাগানো হলে শীতকালের মধ্যেই জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাদ্য তৈরি হয়ে যাবে বলে ধারণা বনকর্তাদের।