প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ সোমবার সংসদের বিশেষ অধিবেশন। তার আগে রবিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ বুধবার এমনই বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। এই নিয়ে এদিন টুইট করেন প্রহ্লাদ। আগামী রবিবার বিকেল ৪-৩০ এ সময় ওই বৈঠক শুরু হবে বলে তিনি জানান। বৈঠকে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে সমস্ত দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার নেতাদের কাছে ই-মেল করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রহ্লাদ যোশী। এই বৈঠক থেকেই সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে আভাস মিলতে পারে বলে আশাবাদী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বুধবার নয়াদিল্লিতে যখন বিরোধী জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠক চলছে, সেদিনই ঘোষণা করা হল সর্বদলীয় বৈঠকের নির্ঘন্ট। দুটি ঘটনা কী নিছকই কাকতালীয়, নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক, উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য গত মাসেই শেষ হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন৷ পরের অধিবেশন হওয়ার কথা শীত কালে, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে৷ শীতকালীন অধিবেশন হওয়ার আগেই আরও একটি বিশেষ অধিবেশন বসতে চলেছে সংসদে। অগস্টের শেষে কেন্দ্রের তরফে এই অধিবেশনের বিষয়ে ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে এই নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কী নিয়ে আলোচনা হবে, কী কী বিল পেশ হতে পারে, সেই নিয়েই জল্পনা চলছে গোটা দেশজুড়ে। কিন্তু এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে সরকারপক্ষ। প্রসঙ্গত, সংসদের বিশেষ অধিবেশন নিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি চিঠি লিখেছেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কী নিয়ে আলোচনা হবে, সেই বিষয়ে ওই চিঠিতে তিনি প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রীকে। তা ছাড়া সনিয়ার প্রস্তাবিত ন’টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, মণিপুর সঙ্কট, এমনকি আদানি বিতর্ক। পাশাপাশি, জাতগণনা বিতর্ক, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে রাজ্য রাজ্যে কৃষকদের আন্দোলন, হরিয়ানা-সহ কয়েকটি রাজ্যে সাম্প্রতিক গোষ্ঠীহিংসা নিয়েও এই অধিবেশনে আলোচনার দাবি জানান সনিয়া গান্ধী।
অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও বিভিন্ন মাধ্যমে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে বিরোধীরা মনে করছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রণয়ন এবং সংবিধান সংশোধন করে ‘ইন্ডিয়া’ নাম ছেঁটে ফেলে শুধু ‘ভারত’কে স্বীকৃতি দেওয়ার বিল পাশ করানোর চেষ্টা করবে মোদী সরকার। তাঁদের মতে, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির এই ‘দেশভক্তি’র প্রচার আরও বাড়বে।
এদিকে এখনও বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি প্রকাশ না করার জন্য সরকারকে নিশানা করেন কংগ্রেস সংসদ জয়রাম রমেশ। তিনি বলেছেন, আজ ১৩ সেপ্টেম্বর। সংসদের সংক্ষিপ্ত বিশেষ অধিবেশন আর পাঁচ দিন পরে শুরু হবে। তাঁর কটাক্ষ, ‘অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় খুব সম্ভবত একজন বা দুজন জানেন। সরকারের অন্য কারও এ সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই।’
একইসুর শোনা গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কণ্ঠে। তিনি জানিয়েছেন, ‘সংসদীয় অধিবেশন শুরু হতে দুটি মাত্র কর্মদিবস বাকি৷ অথচ আলোচ্যসূচী নিয়ে বিরোধীরা অন্ধকারে। আমরা জানি, মাত্র ২ জন (মোদী ও শাহ) সবই জানেন। এরপরেও আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের গুণ গাইব।’ সূত্রের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারেন।