জসিমুদ্দিন আহম্মদ ও দীপঙ্কর মিত্র, মালদা ও রায়গঞ্জ: চাকরিহারাদের বক্তব্য শোনার পর আইনি প্রক্রিয়া চালাতে টাকা খরচ না করে নিজেদেরকেই আদালতে সওয়াল করার পরামর্শ দিলেন ইংরেজবাজারের বিধায়ক। একইসঙ্গে বিচার ব্যবস্থায় আস্থা রাখার পরামর্শ দিলেন শ্রীরূপা মিত্র। বৃহস্পতিবার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ্য প্রার্থীদের প্রামাণ্য নথি উদ্ধারে চেষ্টা চালানোর কথাও বলেন তিনি।
মালদার চাকরিহারাদের কয়েকজন বৃহস্পতিবার কথা বলেন ইংরেজবাজারের বিধায়কের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে একজন চাকরিহারা শিক্ষক অমিত দের রাতের ঘুম উড়েছে। মাথার উপর ১২ লক্ষ টাকার ব্যাংকের ঋণ। সেই ঋণ শোধ হবে কি করে? শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর দিল্লির উপরমহলে জানাশোনা। তাঁর কাছে গেলে কোন পথ পাওয়া যেতে পারে, এই আশায় বৃহস্পতিবার সকালে মালদা জেলার চাকরিহারাদের একাংশকে নিয়ে অমিতবাবু দেখা করলেন তাঁর সঙ্গে। শহরের এক বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় বৃহস্পতিবার চাকরিহারা শিক্ষকরা বিধায়কের সামনে নিজেদের অসহায়তার কথা জানালেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের প্যানেলে মালদা জেলার চাকরিহারাদের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। যাদের প্রায় প্রত্যেকের বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। সংসার জীবনে দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছে হঠাৎ তাঁরা জানতে পারছেন চাকরি আর নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। এদিন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সামনে নিজেদের অসহায়তার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন চাকরিহারা শিক্ষিকা পায়েল দাস। তাঁর কথায়, ‘ঘাড়ের উপর হোম লোনের খাঁড়া ঝুলছে। রোজগারের পথ এখন বন্ধ। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছিলেন সেখানে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করা ছিল। যোগ্যরা সকলেই আশ্বস্ত ছিলাম যে আমাদের চাকরি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পুরো প্যানেলটাকেই বরখাস্তের রায় দিয়ে দিল। আমরা এখন কি করব?’
চাকরিহারা শিক্ষক অরিন্দম দাস জানান, ‘আইটি সেক্টর ছেড়ে শিক্ষকতার পেশা বেছে নিয়েছি। র্যাংকিংয়ে প্রথম হয়েছিলাম। প্রভিশনাল লেভেলে ২ বছর চাকরি করার পর আমাদের মেডিকেল ও পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়েছে। কিন্তু যোগ্য থাকা সত্ত্বেও বাদ দেওয়া হল। কারা যোগ্য আর অযোগ্য তাঁর তথ্য আছে এসএসসির কাছে। সেই তথ্যও কি লোপাট করার চেষ্টা হচ্ছে?
চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা সুবিচারের আশায় বুধবার বিকেলে রায়গঞ্জের সাংসদ কার্তিকচন্দ্র পালের সঙ্গে দেখা করে দাবিপত্র তুলে দিলেন। শিক্ষক শিশির সরকার বলেন, ‘আমরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও চাকরি চলে গেছে। বিনা দোষে শাস্তি পেলাম। সাংসদের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা দিতেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’ অন্যদিকে, সাংসদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি চলে গেছে অনেকের। ওঁরা একটি স্মারকলিপি দিলেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ওঁদের আবেদনের কথা জানাব।’