জলপাইগুড়ি: মানসিক রোগ না ভূতপ্রেতের প্রকোপ? মনস্তত্ত্ব কিন্তু এই নির্ভেজাল কুসংস্কার মানতে নারাজ। রবিবার রাতে এমনই এক দৃষ্টান্তের সাক্ষী রইল জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানপাড়া এলাকা। ফুটবল খেলতে গিয়ে ফিরে আসেনি নাতি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে অর্জুন গাছে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় নাতির নিথর দেহ (Student unnatural death)। তাকে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতের নাম অংশু রায় (১১)। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। কিন্তু কেন এমনটা করল অংশু? দাদু দীনেশ রায়ের অভিমত, তাঁর নাতিকে নাকি ‘ভূতে’ ধরেছিল। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করেছে।
অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের নাউয়াপাড়ার বাসিন্দা কার্তিক রায়। কর্মসূত্রে তিনি একজন টোটোচালক। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে অংশু মেজো। ছোটবেলা থেকেই অংশু পাহাড়পুর প্রধানপাড়ায় তার দাদু-দিদিমার কাছেই মানুষ। রবিবার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে সস্ত্রীক কার্তিক তাঁর শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন। ছেলেও বাবা-মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেছে। জানা গিয়েছে রবিবার দুপুরে অংশু পাড়ার একটি পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় দিদিমা বিনতা রায় তাঁকে খুঁজতে যান। কেন পুকুরে স্নান করতে নেমেছে সেই নিয়ে বকাঝকাও করেন দিদিমা। এরপর বাড়ি ফিরে দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে বাড়ির থেকেই কিছুটা দূরে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। এরপরই ঘটনা। জানা গিয়েছে পরনের গেঞ্জি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় সে।
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি পুকুরে নামার জন্য দিদিমার বকাঝকাতেই এমনটা ঘটাল নাতি? বিনতা বলেন, ‘তেমন বকাঝকা আমি করিনি যেটাতে নাতির মনে খারাপ হবে। আমরা মনে হয় অর্জুন গাছের থেকে কোনও ভূতপ্রেত ওর শরীরে ঢুকেছিল। ও নিজে থেকে আত্মহত্যা করতে পারে না।’ একই কথা দাদু দীনেশ রায়ের। তিনি বলেন, ‘দিনকয়েক আগে নাতি আমাকে বলেছিল তাকে সবসময় কে যেন ডাকে। ওর শরীর ভালো লাগে না। আমরা ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কে তাকে ডাকে? কিন্তু কোনও উত্তর দেয়নি। ভূতপ্রেত জাতীয় কিছুর কুপ্রভাবেই নাতিকে হারালাম আমরা।’
জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউত বলেন, ‘ভূতপ্রেত বলে বাস্তবে কিছু নেই। এগুলো এক শ্রেণির মানুষের ভ্রান্ত ধারণা এবং কুসংস্কার। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকি।’