ছবিটি সংগৃহীত
শুভ সরকার ও সৌভিক সেন: পড়ুয়ারা বলছে, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। তাই নিয়মিত যাই না। শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার এতটাই কম যে, পড়ানোর উৎসাহ থাকে না। তাহলে এই বিষচক্র থেকে বের হওয়ার উপায় কী? ঘুরেফিরে সেই গৃহশিক্ষকরাই মুশকিল আসান?
এই ধরা যাক কামাখ্যাগুড়ির শুভশ্রী সাহার কথা। মেধাবী শুভশ্রী নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। কারণ তাকে একদিকে ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের দেখভাল করতে হয়। বাড়ির রান্নাবান্না, কাজকর্ম সেরে রোজ রোজ আর স্কুলে যাওয়ার ফুরসত পায় না। কিন্তু বাকিরা?
মাধ্যমিকে ভালো ফল করা চান্দামারির নিমাই বর্মন তো বলেই ফেলল সমস্যার কথা। তার স্কুলে পরিকাঠামোই নেই। কখনও ইতিহাসের শিক্ষক অঙ্ক পড়াচ্ছেন। পদার্থবিজ্ঞানের কোনও শিক্ষক নেই। স্কুলে গিয়ে কী হবে? ‘বরং বাবাকে ভুট্টা তোলার কাজে সাহায্য করি। ধান কাটার সময় সাহায্য করি।’ সাফ কথা নিমাইয়ের।
তাই সামর্থ্য থাক বা না থাক, কোচিংয়ের ব্যাচে নাম না লেখালে যে পরীক্ষার বৈতরণি পার হওয়া যাবে না, সেকথা সকলেই বুঝে গিয়েছে। মাধ্যমিকে তাকলাগানো ফল করে সবে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করেছে গাজোলের অবারিত হক রোদ্দুর। এখনই সপ্তাহে চার-পাঁচদিন স্কুলে যায়। বাকি দিনগুলো স্কুলের সময় বাড়িতেই পড়াশোনা করে। অথচ অবারিত যে স্কুলের ছাত্র, গোটা রাজ্যে তার সুনাম। সেখানে কিন্তু পরিকাঠামো বা শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে কোনও সমস্যাই নেই। তাও অনীহা!
এই কথাটাই বলছেন শিলিগুড়ি বয়েজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রণজয় দাস, ‘স্কুলে সব ক্লাস হয়। যারা সিরিয়াস নয়, তারাই আসে না।’
কিন্তু তথ্য বলছে সিরিয়াস পড়ুয়ারাও তো নিয়মিত স্কুলে আসছে না। এই প্রবণতা বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে। শহরের স্কুলগুলিতেই বেশি। প্রাইভেট টিউশনই যে পড়ুয়াদের মোক্ষ, সেই সারমর্ম বুঝেছেন গৃহশিক্ষকরাও।
এমন বহু গৃহশিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের পড়ানোর ব্যাচ শুরুই হয় দুপুরে। বেলা ১০টা-১১টা বা দুপুর ২টো থেকে। স্কুলের সময়ে। অর্থাৎ তাঁরা ঘুরিয়ে বলেই দিচ্ছেন, স্কুলের ক্লাসে যেতে হবে না, কোচিং ক্লাসে এলেই হবে।
আলিপুরদুয়ার শহরের এমনই একজন গৃহশিক্ষকের দাবি, সারাদিন অনেক ব্যাচ পড়াতে হয়, তাই এসব সুবিধা-অসুবিধা দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কোনও ছাত্রছাত্রী বা তাদের অভিভাবক কিন্তু একবারও এই সময়ের সংঘাত নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। কারণ, স্কুল গৌণ হয়েছে অনেকদিনই।
মালদা শহরের উপকণ্ঠের একটা স্কুলের একেবারে টাটকা উপস্থিতির হিসেবটা দেখা যাক। গরমের ছুটি, ভোটের ছুটি ইত্যাদি কাটিয়ে সবে স্কুল খুলেছে। জোত আড়াপুর পরেশনাথ হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ১২০ জন। প্রথম দিন এসেছিল ১৭ জন। পরেরদিন ৭ জন। তৃতীয় দিনে একটু উন্নতি। ২০ জন। এটা কিন্তু ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণ। তাও প্রথম দিন যে ১৭ জন এসেছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয় দিন আসেনি। দ্বিতীয় দিনের ৭ জনের সবাই আবার তৃতীয় দিন আসেনি।
এবার একজন শিক্ষক গুটিকয়েক পড়ুয়াকে প্রথম দিন যা পড়াতে শুরু করেছিলেন, দ্বিতীয় দিন সেটারই বাকি অংশের যে ক্লাস সেটা তো করলই না সেই পড়ুয়ারা। শিক্ষক হয়তো হাজিরা দিয়ে ক্লাস নিয়ে কর্তব্য সারলেন। কিন্তু আসা ও না আসা পড়ুয়া, কারও একফোঁটা লাভ হল না।
ছাত্ররা বলছে, সেজন্যই নাকি টিউশন জরুরি! স্কুলে যাওয়ার পথে ২০ টাকা গাড়িভাড়া বাঁচাতে বালুরঘাটের মিতালি বর্মন সাইকেলে পাড়ি দিত ১৪ কিলোমিটার। এদিকে, পেশায় পাথরমিস্ত্রি বাবা মাইনে দিতেন চারজন গৃহশিক্ষকের। মিতালির কথায়, ‘স্কুলে পড়াশোনা হয় না, এটা ঠিক নয়। তবে টিউশনের স্যর পড়ার প্রতি চাপ তৈরি করেন। সেই চাপে পড়া ভালো হয়।’ টিউশনের জন্য সপ্তাহে এক-দু’দিন করে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিত মিতালি। তার কথায়, ‘তাছাড়া আর কিছু করার ছিল না।’
শিলিগুড়ির এক হাইস্কুলের ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কোভিডকালের পর থেকেই নাকি তার সহপাঠীদের মধ্যে ক্লাসে গরহাজির থাকার প্রবণতা বেড়েছে। কামাখ্যাগুড়ির একটি স্কুলে আবার কয়েকজন শিক্ষক ক্লাস রুমে ঢুকতেই নাকি পেছনের দরজা দিয়ে ছাত্ররা বেরিয়ে যায়। সেই শিক্ষক বা শিক্ষকরা কি বিষয়টি টের পান না! এক ছাত্রের দাবি, স্যরেরা কিছু বলেন না। সেজন্যই ওরা বেরিয়ে যাওয়ার সাহস পায়।
ব্যতিক্রম কি নেই? কোনও কোনও স্কুল শিক্ষক নিয়মিত হোমওয়ার্ক দেন। সেই খাতা চেকও করেন। আবার কোনও গৃহশিক্ষক পড়ুয়ার পরিবারের কথা জানতে পেরে বেতন কম নেন। বা নেনই না। কিন্তু তাঁরা হাতেগোনা।
পঠনপাঠনের রাস্তাটা কখন যেন স্কুলের মোড়ে এসে ইউ টার্ন নিয়ে নিয়েছে কোচিংয়ের ব্যাচের দিকে। উত্তরবঙ্গের গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই।
অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: সকালের টিফিন বা বিকেলে চায়ের সঙ্গে ফাস্ট ফুড এখন সবার পছন্দের। পিৎজা,…
শিলিগুড়ি ও কলকাতা: এবার বিদ্রোহ উত্তরের পাহাড়েও। সিকিমের শেয়ার ক্যাব নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে…
শীতলকুচি: রাজ্যে শিক্ষার হাল অত্যন্ত করুণ। গোলেনাওহাটি জামে হাই মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতার আসনে রাহুল গান্ধি (Rahul Gandhi)। দায়িত্ব হাতে নিয়েই…
শামুকতলা: ৩১সি জাতীয় সড়ক ধরে মহাকাল চৌপথির দিকে যেতেই বাঁদিকে পুঁটিমারি হাইস্কুলের পাশ দিয়ে দুর্গাবাড়ি…
মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: সম্ভবত এমন পরিস্থিতিতেই বলা হয়, ‘আমও গেল, ছালাও গেল’। স্বামী রুজির…
This website uses cookies.