তুফানগঞ্জ: তুফানগঞ্জের লম্বাপাড়ার বাসিন্দা নম্রতা মান্তা। ঝুলিতে ৯১ শতাংশ নম্বর নিয়ে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছে। কিন্তু এখন সে কিছুটা ‘কনফিউজড’। এরপরে কোনও বিষয় নিয়ে স্নাতক পড়াটা ঠিক হবে নাকি এখন থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নামা উচিত, ঠিক করতে পারছে না। একই সমস্যায় পড়েছে সাথী সাহা এবং বিশ্বজিৎ ডাকুয়া। রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর গতানুগতিক ধারায় পড়াশোনা করবে নাকি কর্মমুখী কোর্স করবে? ঠিক করতে পারছে না তারাও।
স্কুলের উত্তীর্ণদের নিয়ে সঠিক কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হলে সমস্যা অনেকটাই দূর হত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমরচন্দ্র মণ্ডল বললেন, ‘কেরিয়ারের সঠিক রাস্তা খুঁজে পেতে পড়ুয়াদের যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফে বিভিন্ন স্কুলে মাসদেড়েক আগে কাউন্সেলিং করানো হয়েছিল। অনেকেই নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছে।’ প্রয়োজন হলে স্কুলগুলোতে আবারও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন তিনি।
স্কুল, কলেজ, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে পা রাখার সন্ধিক্ষণগুলি জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়গুলোতে একটা সিদ্ধান্ত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের পর কী নিয়ে পড়লে চাকরির সম্ভাবনা প্রচুর রয়েছে, বা দ্রুত সাফল্য পাওয়া যাবে, সেটা অনেক সময়ই ঠিক করতে পারে না পড়ুয়ারা। অনেকে পরিবার কিংবা সমাজের চাপে অপছন্দের বিষয় নিয়ে এগিয়ে গেলেও সাফল্য আসে না। এই সময় কেরিয়ার কাউন্সেলিং পড়ুয়াদের ভাবতে সাহায্য করে। তাদের পছন্দের বিষয় জেনে সেখান থেকে কেরিয়ার গড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের নম্রতা মান্তার কথায়, ‘ইচ্ছে ছিল শিক্ষিকা হব। কিন্তু স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে কোন পথটা ঠিক হবে, কাউন্সেলিং হলে একটা ধারণা পেতাম।’
ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রজতকান্তি দেবনাথের মুখেও একই কথা শোনা গেল। তাঁর বক্তব্য, ‘কোন পথে গেলে ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে তুলতে পারবে তা বোঝার ক্ষমতা সব ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সমানভাবে থাকে না। তাই স্কুলের গণ্ডি পার করার পর দিশা হারিয়ে ফেলে কয়েকজন।’ বাঁধাধরা কয়েকটা রাস্তা দিয়ে এগোনোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এখন যে আরও অনেক নতুন নতুন রাস্তা রয়েছে, তার অর্ধেকেরই খোঁজ নেই পড়ুয়াদের কাছে। কেরিয়ার কাউন্সেলিং হলে সেই সমস্যা মিটে যায়। কোন কলেজে কোন কোন বিষয় রয়েছে, সেটা ইতিমধ্যে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে স্কুলের পড়ুয়াদের জানানো হয়েছে, জানালেন তিনি।
বেশ কয়েকটি বড় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণ করা হয়ে গিয়েছে। সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেক পড়ুয়া সেই সুযোগ হারিয়েছে। অনেকে শেষমুহূর্তের চেষ্টা চালাচ্ছে।