কলকাতা: এবার অনলাইন প্রতারণার শিকার প্রখ্যাত ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। কয়েক লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। এ ব্যাপারে তিনি ইতিমধ্যেই দু’টি থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। সোমবার তিনি হতাশ গলায় বললেন, ‘বুঝতে পারছি না, কী করব? হঠাৎই টাকা তুলতে গিয়ে দেখি প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আমার অ্যাকাউন্টে নেই। এই টাকা পাওয়া না গেলে এখন তো না খেয়ে মরতে হবে।”
সুব্রত জানিয়েছেন, পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর সঞ্চয় গায়েব হয়ে গিয়েছে। আচমকাই তাঁর ফোনে দিন পাঁচ-ছয় আগে টাকা তোলার এসএমএসআসে। তখনই তিনি জানতে পারেন। ব্যাংকের নির্দেশে তিনি পার্ক স্ট্রিট ও গল্ফ গ্রিন থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, প্রতিদিনই বহু মানুষ এই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিধাননগর সিটি পুলিশের তরফে তাদের ফেসবুক পেজে নাগরিকদের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আপনার মোবাইলে কি এনিডেস্ক বা রাস্টডেস্ক-এর মতো কোনও অ্যাপ ইনস্টল করা আছে? এই জাতীয় অ্যাপ থাকলে এই মুহূর্তে তা ফোন থেকে মুছে ফেলুন।
তারা জানিয়েছে, এই ধরনের অ্যাপকে রিমোর্ট অ্যাক্সেস অ্যাপ বলা হয়। অর্থাৎ এই জাতীয় অ্যাপের মাধ্যমে যে কোনও জায়গা থেকে বসে অন্য ব্যক্তি আপনার ফোনের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যেতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফোন থেকে সে প্রয়োজনীয় টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দিতে পারে। এজন্য ব্যাংকের তরফে পাঠানো এসএমএস থেকে দূরবর্তী ওই ব্যক্তি ওটিপি পড়ে নিশ্চিন্তে টাকা-পয়সা, সরিয়ে নিতে পারে। তাঁর ফোন ব্যবহার করে এত কাজ করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা বিন্দুমাত্র টের পান না। তাই জরুরি সাইবার সতর্কতা জারি করে বিধাননগর সিটি পুলিশের তরফে নাগরিকদের অবিলম্বে এই অ্যাপ মুছে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বুঝতে পারেন না কোন আপটি ভালো আর খারাপ। সেজনাই বিধাননগর পুলিশ ফেসবুক পেজে লিখে দিয়েছে অজানা কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। এটি সিকিউরিট নষ্টের জন্য ফাঁদ হতে পারে। রিজার্ভ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা সেলের তরফে সম্প্রতি দেশের সমস্ত ব্যাংককে একটি গোপন সার্কুলার পাঠানো হয়েছে। সেই সার্কুলারেও ইউপিআই ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপের জালিয়াতিমূলক কাজকর্ম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এভাবে ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ আসছে। রিজার্ভ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা শাখার মাসিক নিউজ লেটারে এই ধরনের ফিশিং, কেনাকাটা বা ভিশিং, কার্ড ক্লোনিং ও ই-ওয়ালেট জালিয়াতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলিকে এব্যাপারে গ্রাহক সচেতনতা তৈরির জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে স্টেট ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মোট ৫০ কোটি টাকারও বেশি লুটে নেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংক ৫৭৪টি অভিযোগ দায়ের করেছে। সারা দেশে মোট ৫৩টি ব্যাংক কাজ করে। তারমধ্যে এই ব্যাংকের পক্ষ থেকেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাংকের নোটিফিকেশন থেকে জানা গিয়েছে, জালিয়াতরা প্রথমে প্লে-স্টোর থেকে এই ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করে সংশ্লিষ্ট, ব্যক্তির মোবাইলে ইনস্টল করতে বলে। এরপর তারা ১ সংখ্যার নম্বরটি গ্রাহকের কাছ থেকে চেয়ে নেয়। তার মাধ্যমেই তারা গ্রাহকের মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে পেয়ে যায়। ইনস্টল করার পরবর্তী সময়ে ওই গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংক বা ওয়ালেটের যেসব অ্যাপ ডাউনলোড করবেন তার ইউপিআই নম্বর সহ সমস্ত ওটিপি জালিয়াতদের কাছে পৌঁছে যায়। গ্রাহকের ফোন ব্যবহার করে জালিয়াতরা যথেচ্ছ অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারে। সেজন্যই পুলিশ ও ব্যাংকের তরফ থেকে জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে সতর্ক করা শুরু হয়েছে।