সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

Summative Assessment | বেড়ে গেল পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের নম্বর, শিক্ষকের অভাবে দুর্দশা স্কুলগুলিতে

শেষ আপডেট:

প্রসেনজিৎ সাহা, দিনহাটা: কোর্টের নির্দেশের পরও চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষকরা স্কুলে আসছেন না। এরই মাঝে স্কুলের তিনটি সামেটিভ পরীক্ষার (Summative Assessment) নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছে পর্ষদ। এতে চাপ বাড়ছে ছাত্রছাত্রীদের ওপর। পাঠক্রম পরিবর্তন না হলেও নম্বর বাড়ায় বাড়ছে প্রশ্ন সংখ্যা। এর জন্য বাড়াতে হবে ক্লাসের সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই চাকরি বাতিলের জেরে স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা কমায় কীভাবে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে, তা নিয়ে দিশেহারা স্কুলগুলি।

আগে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সামেটিভ পরীক্ষা হত যথাক্রমে ১০, ১৫ ও ৫০ নম্বরের। অর্থাৎ মোট ৭৫ নম্বরের। সেখানে বর্তমানে নতুন নম্বর বিভাজনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নে যথাক্রমে ২০, ৩০ ও ৫০ নম্বরের অর্থাৎ মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। অন্যদিকে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আগে যেখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সামেটিভ যথাক্রমে ১৫, ২৫ ও ৭০ নম্বরের অর্থাৎ মোট ১১০ নম্বরের হত, এখন সেখানে ৩০, ৫০ ও ৭০ নম্বর অর্থাৎ মোট ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। সেইসঙ্গে এবছর থেকে পর্ষদ স্কুলগুলিকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সার্বিক রিপোর্ট কার্ড (হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড) করতে বলেছে। এই সার্বিক প্রগতিপত্রে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে শিক্ষাবর্ষে তার আচরণগত মূল্যায়ন থেকে শুরু করে বিগত কোনও সামেটিভে কোনও দুর্বলতা থাকলে তা নির্ণয় করে সেই দুর্বলতা কতটা কাটিয়ে ওঠা গেল, সেই বিষয়গুলি স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে।

এই নির্দেশিকার পরই চাপ বেড়ে গিয়েছে স্কুলগুলির। তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাকরি বাতিল। সিলেবাস শেষ হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস কতটা হবে তা নিয়ে পড়ুয়াদের মতোই অভিভাবকরাও চিন্তিত। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া অনুষ্কা দেবনাথের কথায়, ‘সারা বছর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক কিংবা ভোটের জন্য দীর্ঘ সময় ক্লাস বন্ধ থাকে। বাকি সময়ে যতটুকু ক্লাস হয় তাতে সিলেবাস শেষ হয়ে ওঠে না। তার ওপর এবছর থেকে প্রতিটি সামেটিভে নম্বর বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি প্রশ্ন থাকছে। তার জন্য বেশি ক্লাসের প্রয়োজন। কিন্তু যেভাবে স্যরদের মুখে চাকরি বাতিলের খবর শুনছি, তাতে সিলেবাস শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’ একই বক্তব্য এক অভিভাবক রমা রায়েরও।

পর্ষদের নতুন নির্দেশে  চিন্তায় পড়েছে দিনহাটা মহকুমার স্কুলগুলিও। যেমন নয়ারহাট হাইস্কুলে পড়ুয়া অনুপাতে শিক্ষক থাকার কথা ছিল ৫০ জন। সেখানে  ৩০ জন শিক্ষক দিয়েই স্কুল চলছিল। তার ওপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সাতজন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। বর্তমানে সেখানে শিক্ষক সংখ্যা ২৭। প্রধান শিক্ষক তাপস সরকার বলেন, ‘সামেটিভে নম্বর বাড়ায় প্রশ্নের সংখ্যা বাড়াটাই স্বাভাবিক। ফলে আরও বেশি ক্লাস প্রয়োজন। শিক্ষক সংকটের জেরে সেই ক্লাস করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

একই সমস্যায় ওকরাবাড়ি আলাবক্স হাইস্কুলও। তাদের পাঁচজন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ দেব বলেন, ‘শিক্ষক সংকটে সমস্যা তো কিছুটা হবেই। বিশেষ করে এবছর সার্বিক প্রগতিপত্র তৈরি করতে গিয়ে সমস্যা বাড়বে।’

এদিকে, নতুন নম্বর বিভাজন ব্যবস্থায় শিক্ষকের সংকট যে সমস্যা তৈরি করবে তা মেনে নিয়েছেন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) জয়ন্ত অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘চাকরি বাতিলের জেরে বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সমস্যা কিছুটা হবে। তবে আইনি জটিলতা কাটলে সমাধান হতে পারে।’

Shahini Bhadra
Shahini Bhadrahttps://uttarbangasambad.com/
Shahini Bhadra is working as Trainee Sub Editor. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Online. Shahini is involved in Copy Editing, Uploading in website.

Share post:

Popular

More like this
Related

Nathu La | এবার সিকিম হয়ে কৈলাস যাত্রা, অবশেষে খুলছে নাথু লা, পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ কেন্দ্রের 

সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উত্তরাখণ্ডের পথ বন্ধ হতেই...

Balurghat | শহর দাপাচ্ছে মদ্যপ বাইকচালকের দল, অভিযানে নেমে কয়েকজনকে আটক, বাজেয়াপ্ত গাড়িও

পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: সন্ধ্যা নামতেই শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মদ্যপ...

Raiganj | শহর ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে, সরিয়ে নেওয়ার আর্জি পুরসভার

দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: বিজ্ঞাপনী সংস্থার ফ্লেক্স-ফেস্টুনে ভরে গিয়েছে রায়গঞ্জ...

Jalpaiguri | বেহাল কাঠামো, বাজার হারাচ্ছে সরকারি সংস্থা 

পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: নজরদারির অভাবে ধুঁকছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল...