নয়াদিল্লি : বছরের পর বছর আর ডিটেনশন ক্যাম্পে কাউকে বন্দি করে রাখা যাবে না। অসম সরকারের উদ্দেশে এ ব্যাপারে মঙ্গলবার কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। এনআরসি চলাকালীন যাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় এবং ফরেনার্স ট্রাইবিউনাল যাঁদের অবৈধ অভিবাসী বলে চিহ্নিত করেছিল অসমে, তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। যা সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা উল্লঙ্ঘন বলে জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
এই সংক্রান্ত মামলায় মঙ্গলবার এজন্য অসম সরকারকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছে বিচারপতি অভয় এস ওকা ও উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ। যত দ্রুত সম্ভব, ওই বিদেশিদের তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকারকে। অসন্তুষ্ট আদালত প্রশ্ন তুলেছে, কেন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হচ্ছে কিছু মানুষকে? যদি তাঁরা সত্যিই বিদেশি হন, তাহলে কেন তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না?
তীব্র শ্লেষের সঙ্গে আদালত প্রশ্ন করে, ‘আপনারা কি ‘মুহরত’ (শুভ দিনক্ষণ)-এর জন্য অপেক্ষা করছেন?’ তারপরই বিচারপতিরা দুই সপ্তাহের মধ্যে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক ৬৩ জন বিদেশিকে তাঁদের দেশে পাঠাতে নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে অনির্দিষ্টকাল কাউকে আটকে রাখা তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।’
অবৈধ অভিবাসীদের দেশের ঠিকানা মেলেনি বলে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে অসম সরকারের যুক্তিকে সরাসরি নাকচ করে আদালত মন্তব্য করে, ‘ঠিকানা না পেলেও ফেরত পাঠানো সম্ভব। যেহেতু নাগরিকত্ব নিশ্চিত, তাই তাঁদের ঠিকানার অপেক্ষায় বসে থাকা অযৌক্তিক। এটি সংশ্লিষ্ট দেশের বিষয়, তারা কোথায় তাঁদের নিয়ে যাবে, কী করবে।’
অসমের মুখ্যসচিবের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, ‘আপনারা জানেন, তাঁরা পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশের নাগরিক। তাহলে সে দেশের রাজধানীতে পাঠিয়ে দিন। আপনি কি পাকিস্তানের রাজধানী জানেন? তাহলে সেখানে পাঠান। চিরদিন আটকে রাখা যাবে না। ঠিকানা না থাকলেও বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’
এখনও পর্যন্ত কতজন অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং কতজন এখনও ডিটেনশন ক্যাম্পে, তার বিস্তারিত দিয়ে হলফনামা পেশ করতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে যথাযথ সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘রাজ্যের লিগ্যাল সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব আছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। মহিলা চিকিৎসক নেই। খাদ্য, পানীয় জল ও নিকাশি ব্যবস্থার অভাব আছে।’
মামলাটির পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি।