অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: মিষ্টির দোকানে কাচের শোকেসে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা লাড্ডু, চমচম, সন্দেশ, কাজু বরফি, কালোজাম সহ ভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন মিষ্টি। কিন্তু তাতে নেই মিষ্টি তৈরির কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখের ট্যাগ৷ গ্রাহকের বোঝার উপায় নেই মিষ্টি কেমন, কবে তৈরি করা হয়েছে বা আদৌ ফ্রেশ কি না। বারবার বৈঠক, অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মশালা, একাধিক নির্দেশের পরেও হাত দিয়ে, হেড ক্যাপ ছাড়াই মিষ্টি প্যাকেটে ভরে ক্রেতাদের দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জেলার কনজিউমার অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘দ্রুত আমরা ফুড সেফটি দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান করব। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিক্রি করছেন। তা অত্যন্ত দুঃখের।’
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরে ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৫-৩০টা মিষ্টির দোকান রয়েছে৷ এরমধ্যে হাতেগোনা মাত্র ৩-৪টে মিষ্টির দোকান ছাড়া আর কোনও দোকানেই নেই ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)-এর নির্দেশ অনুয়ায়ী মিষ্টি তৈরি ও কতদিন ব্যবহার করা যাবে তার ট্যাগ। শুধু আছে কোন মিষ্টির কত দাম। আবার কিছু দোকানে বোর্ডে মিষ্টির নাম দিয়ে কতদিন ব্যবহার করা যাবে বলে লেখা থাকলেও সেদিকে সচরাচর চোখ যায় না ক্রেতাদের৷
শহরের বাসিন্দা বুবাই শিকদারের কথায়, ‘একদিন শহরের একটি দোকান থেকে লাড্ডু কিনেছিলাম৷ ৫ বছরের মেয়েকে ভেঙে খেতে দিতেই দেখি ভেতরে ফাঙ্গাস ভর্তি। যদি না ভাঙতাম তাহলে হয়তো মেয়ে না বুঝেই ওটা খেত। আর শরীর খারাপ করত। রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিরুপায়৷ শহরের অধিকাংশ কেন, সারা জেলা ঘুরলেও হাতেগোনা কয়েকটি মিষ্টির দোকান ছাড়া সবেরই একই হাল। তাহলে আমরা মিষ্টি কিনব কোথা থেকে?’
প্রায় ৩-৪ বছর আগে এফএসএসএআইয়ের তরফে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কবে মিষ্টি বানানো হয়েছে এবং তা কতদিন পর্যন্ত খাওয়া যাবে সেটা ক্রেতাদের জানাতে হবে। এজন্য ২০০৬ সালের কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। নির্দেশ-আইন কোনও কিছুকেই তোয়াক্কা না করে দিব্যি চলছে জলপাইগুড়ির একাধিক মিষ্টির দোকান। মিষ্টি ব্যবসায়ী বিজয় চৌধুরী তো বলেই ফেললেন, ‘ওগুলোর প্রয়োজন হয় না। সব ফ্রেশ মিষ্টি। তবে ট্যাগ করে নেব।’ বিষয়টি দেখছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ফুড সেফটি ইনস্পেক্টিং অফিসার রাজেন রাই।
এখন প্রশ্ন হল, কবে অভিযান হবে? অভিযানের পর কি আদৌ দোকানে মিষ্টি তৈরি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখের ট্যাগ বসবে, নাকি বাসিন্দাদের কিছু না জেনেই মিষ্টি কিনতে হবে এবং লক্ষ্মীলাভ হবে ব্যবসায়ীদের।