উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ম্যাগনেশিয়াম এমন একটি খনিজ, যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের পেশি ও স্নায়ুর কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে এই খনিজটি। এছাড়া হাড় মজবুত করার পাশাপাশি হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারও কারও শরীরে এই খনিজের বেশ ঘাটতি থাকে, যা আমরা প্রায়শই পাত্তা দিই না (Magnesium Deficiency)।
বাদাম, বীজ, সবুজ শাকসবজি এবং হোল গ্রেন ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। এটি শরীরের ৩০০-রও বেশি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেশিগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম। এছাড়া নার্ভ ফাংশনে সাপোর্ট করে, হাড় শক্ত করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঘাটতি কেন হয়
- সুষম খাবার না খাওয়া
- ডায়াবিটিস বা কিডনির রোগ থাকলে
- পাচনতন্ত্র দুর্বল হলে
- ডিউরেটিকস বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে
- মদ্যপান
- স্ট্রেস এবং বয়স
ঘাটতির লক্ষণ
ক্র্যাম্প – মাসল ক্র্যাম্প বা আকস্মিক টান ধরা সবথেেক সাধারণ লক্ষণ। পেশি সংকুচিত হলে শিথিল হতে সাহায্য করে ম্যাগনেশিয়াম। শরীরে যদি পর্যাপ্ত মাত্রায় এই খনিজ না থাকে তাহলে পেশিগুলো টাইট হয়ে যায় এবং সহজেই টান ধরে। দেখবেন রাতে অনেকের পায়ে টান ধরে।
দুর্বলতা – সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের পর ক্লান্ত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই ক্লান্তি বা দুর্বলতা যদি অস্বাভাবিক হয় তাহলে সচেতন হতে হবে বৈকি। শক্তি উৎপাদনে ম্যাগনেশিয়ামের ভূমিকা রয়েছে। যখন শক্তির মাত্রা কমে যায় তখন আপনার শরীর শক্তি তৈরির জন্য লড়তে থাকে, ফলে বিশ্রাম নিলেও অবিরাম ক্লান্তি থেকেই যায়।
অসাড়তা – কারও কারও হাত-পা অসাড় হয়ে যায় বা ঝিনঝিন ধরে। এমনটা হওয়ার কারণ ম্যাগনেশিয়াম নার্ভকে সঠিক সিগন্যাল পাঠাতে সাহায্য করে। কিন্তু এই খনিজের অভাব হলে নার্ভে জ্বালা বা ক্ষতি হয়, যা একপ্রকার অস্বস্তি তৈরি করে।
মেজাজ পরিবর্তন – ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের রাসায়নিককে প্রভাবিত করে, যা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে উদ্বেগ বাড়তে পারে, বিরক্তি আসতে পারে এমনকি ডিপ্রেশনও হতে পারে। যদিও কোনও কারণ ছাড়াই আপনার প্রায়ই মেজাজ পরিবর্তন হয় বা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাহলে তা ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতির ইঙ্গিত হতে পারে।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন – এই খনিজের ঘাটতি হলে বুক ধড়ফড় করতে পারে বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন দেখা দেয়। এই ধরনের লক্ষণ দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। অনেক সময় এগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে শুরু হয় এবং বোঝাই যায় না।
খিদে কমে যাওয়া – কখনও অল্পেতেই পেট ভরে যাওয়া, কখনও বা খিদে কমে যাওয়া বা বমিবমি ভাব ম্যাগনেশিয়াম ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। যদিও এসব সমস্যাকে আমার প্রায়ই হজমের গোলমাল বলে পাত্তা দিই না, কিন্তু এগুলো ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
ঘুমে সমস্যা – ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ুতন্ত্র ও পেশিকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে, ফলে ভালো ঘুম হয়। যদি আপনার অনিদ্রার সমস্যা থাকে তাহলে তা ম্যাগনেশিয়াম ঘটাতির লক্ষণ হতে পারে।
ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা বাড়ানোর উপায়
ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন, শাকসবজি, আমন্ড, কাজু, চিনাবাদাম, কুমড়োর বীজ, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, ব্রাউন রাইস, ওটস, বিনস, ডাল এবং অল্প মাত্রায় ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। তবে আপনার ডাক্তার বললে ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন। বিভিন্ন রকমের সাপ্লিমেন্ট রয়েছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন, স্ট্রেস কমান এবং যদি এমন কোনও ওষুধ খান যাতে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কমে যাচ্ছে তাহলে সচেতন হন, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- পেশিতে মারাত্মক টান ধরলে বা খিঁচুনি ধরলে
- অবিরাম অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হলে বা বুক ধড়ফড় করলে
- খুব ক্লান্তি বা দুর্বল লাগলে
- অন্যান্য অঙ্গও অসাড় হলে
- দৈনন্দিন জীবনে মেজাজ পরিবর্তনের প্রভাব পড়লে
ম্যাগনেশিয়াম ঘাটতির লক্ষণ বুঝে যত তাড়াতাড়ি চিিকৎসকের কাছে যাবেন তত জটিলতা রোধ করা যাবে এবং জীবনের মান উন্নত হবে।