কোচবিহার: প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক সুইমিং পুল উদ্বোধনের ৬-৭ মাস যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। সুইমিং পুলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে সাঁতার কাটার জন্য জল নেই। কিন্তু সাঁতার কাটার জন্য জল না থাকলে সুইমিং পুলের মধ্যে বসার বা আড্ডা মারার জন্য সেখানে চেয়ার পাতা রয়েছে।
শুনতে অবাক মনে হলেও এমনই অবস্থা ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি সংলগ্ন কোচবিহার স্টেডিয়াম চত্বরে থাকা অত্যাধুনিক সুইমিং পুলটির। সংস্কার করে ঠিক কবে সুইমিং পুলটিকে ফের সদস্যদের সাঁতার কাটার জন্য খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়েও পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। এদিকে সুইমিং পুলটিতে সারাবছর সাঁতার কাটার জন্য যাঁরা চার-পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুইমিং পুলটিতে সাঁতার কাটতে না পারায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
সুইমিং পুলের দায়িত্বে থাকা জেলা ক্রীড়া ও যুব আধিকারিক বিবি লেপচা বলেন, ‘সুইমিং পুলটির সংস্কারের কাজ চলছে। সুইমিং পুলের কিছু টাইলস ফেটেছে। সেগুলিকে ঠিক করা হচ্ছে। নতুন করে আরও লাইট লাগানো হচ্ছে। কিছু পাইপও লাগানো হয়েছে। তবে আরও আগেই কাজ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের জন্য কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আশা করছি মে মাসের মধ্যেই সুইমিং পুলটিকে পুনরায় সদস্যদের সাঁতার কাটার জন্য খুলে দিতে পারব।’
রাজবাড়ি লাগোয়া কোচবিহার স্টেডিয়াম চত্বরে গত ৩১ জুলাই ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছিল বহু প্রতীক্ষিত সুইমিং পুলের। উদ্বোধনের দিন থেকেই সুইমিং পুলটিতে সাঁতার কাটার জন্য সদস্যদের কার্যত হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছিল। জানা গিয়েছে, সুইমিং পুলটিতে সাঁতার কাটার জন্য কয়েকশো সদস্য রয়েছেন। সুইমিং পুলটি চালাবার জন্য জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সুইমিং পুল অথরিটি নামে একটি কমিটিও রয়েছে। সেখানে সাঁতার শেখার জন্য প্রত্যেক সদস্যকে ইয়ারলি কার্ড করতে হয়েছে। এই কার্ডের জন্য প্রতি সদস্যের কাছ থেকে তিন হাজার, চার হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে সুইমিং পুলটিতে সাঁতার কাটার জন্য সদস্যদের কাছ থেকে এত টাকা করে নেওয়া হলেও সুইমিং পুলটির রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে প্রশাসন কেন এত উদাসীন?
সুইমিং পুলের সদস্য তথা বিশিষ্ট আইনজীবী রঞ্জিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুইমিং পুল উদ্বোধনের পর তিন হাজার টাকা দিয়ে মেম্বার হয়েছিলাম। ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমাদের কার্ডের ম্যাচুরিটি ছিল। কিন্তু কিছুদিন সাঁতার কাটার পর থেকেই তো সুইমিং পুলটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে আমরা সদস্য হয়েছিলাম, সুইমিং পুলে সেই সাঁতারই কাটতে পারলাম না। এটা তো আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হল। আমাদের দাবি অবিলম্বে সুইমিং পুলটি চালু করে আমাদের মতো যাঁরা বঞ্চিত সদস্য রয়েছেন তাঁদের কার্ডের মেয়াদ বাড়াতে হবে।’
পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী থাকাকালীন এই সুইমিং পুলটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগেই তৈরি হওয়া সুইমিং পুলটির এমন বেহাল দশা নিয়ে বলেন তাঁর সময়ে যখন কাজ শুরু হয়েছিল তখন সবকিছু ঠিকভাবেই হচ্ছিল। কিন্তু পরে তিনি মন্ত্রী না থাকায় কাজের মান নিয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, তৎকালীন জেলা শাসককে বলেছিলাম সুইমিং পুলটির পরিচালনার দায়িত্ব কোচবিহার পুরসভার হাতে দিতে। কিন্তু তিনি তা না দিয়ে প্রশাসনের হাতেই রেখেছেন। আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরা এটি ভালোভাবে চালাতে পারতাম।