উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসের প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগ উঠেছে এক চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বিরুদ্ধে। আজ থেকে নয়, গত ৮ বছরে পুরসভার লক্ষ লক্ষ টাকার হিসেব মিলছে না। অভিনব জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই কুলটি থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন পুরসচিব। এই অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে কুলটি থানার আইসিকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের আর্জি জানিয়েছেন পুর সচিব শুভজিৎ বসু।
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি আসানসোল পুরসভা এলাকার। অভিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীর নাম সোমনাথ মাহাতো। চীনাকুড়ির বাসিন্দা সোমনাথ কুলটি বরো অফিসে পিয়নের কাজ করত। সূত্রের খবর, ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দামাগড়িয়া শাখায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫৬ টাকা জমা দিতে গিয়েছিল সে। কিন্তু তারপর থেকেই আর তার খোঁজ মেলেনি। ব্যাঙ্কে খবরাখবর করে জানা যায় টাকাও জমা পড়েনি। সেই ঘটনার পর ৩ জানুয়ারি পুরসভার পক্ষ থেকে কুলটি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু তারপরেও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।
অবশেষে কংগ্রেস কাউন্সিলর গোলাম সরোবরের অভিযোগের ভিত্তিতে ফের তদন্ত শুরু করে আসানসোল পুরসভা। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৮৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা পড়েনি পুরসভার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কেন এতদিন এই ব্যাপারে কোনও তদন্ত করা হয়নি বা এফআইআর করা হয়নি পুরসভার তরফে, তা নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে সরব হন কংগ্রেস কাউন্সিলার গোলাম সরোবর। এই আর্থিক তছরুপের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করে পুরসচিবকে লিখিতভাবে জানান গোলাম।
গোলাম সরোবরের অভিযোগের ভিত্তিতেই পুর কর্তৃপক্ষ পুরসভার আইনজীবী, ফিন্যান্স অফিসার সহ মোট তিনজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করা নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মতোই কুলটি থানায় অভিযুক্ত অস্থায়ী পিয়ন সোমনাথ মাহাতোর নামে অভিযোগ দায়ের করে পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতিদিন পুরসভার সংগৃহীত রাজস্ব ব্যাঙ্কে জমা দিতে যেত সোমনাথ। ব্যাঙ্কের বইয়ের স্লিপের যে অংশটি জমা পড়ে যেত সেখানে যে টাকা দেখানো হত, ওই স্লিপেরই অন্য অংশে সেই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি দেখানো হত। তাতে ব্যাঙ্কের স্ট্যাম্পও মারা হত। ওই স্লিপ ধরেই পুরসভার ক্যাশ রেজিস্টারে তোলা হত। ফলে পুরসভায় ওই জমা রাখা স্লিপের ভিত্তিতে মনে করা হত, পুরো টাকাটাই জমা পড়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আর্থিক তছরুপের ঘটনা লাগাতার ঘটেছে। এই ঘটনা পুরসভার ফিন্যান্স বিভাগের কর্মীদের কীভাবে নজর এড়াল তার কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন কুলটি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। থানার আইসিকে বিষয়টির তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।