উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ অনন্তনাগে গুলির লড়াই চলেছে ১০০ ঘন্টার ওপরে। রবিবার ভোরবেলা পর্যন্ত শোনা গিয়েছে গুলির আওয়াজ। কিন্তু তারপর বেশ কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও জঙ্গীদের তরফ থেকে গুলির পালটা জবাব আসেনি। অনন্তনাগে টানা ৫দিন ধরে জঙ্গিদের গুলির লড়াই চলেছে সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষীদের। পার্শ্ববর্তী কোকেরনাগের জঙ্গল ঘিরে ফেলে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সেনা। জঙ্গিদের তরফে পালটা জবাব না আসায় সেনাকর্তাদের অনুমান, হয় জঙ্গিরা পাহাড় টপকে পালিয়েছে, নয়তো সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। খুব শীঘ্রই তা স্পষ্ট হবে বলে।
ইন্দো-পাক সীমান্ত অনন্তনাগে গত পাঁচদিন ধরে চলছে জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতীয় সেনার গুলির লড়াই। এই লড়াইয়ে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে দুই সেনাকর্তা সহ এক পুলিশ আধিকারিক। জঙ্গিদের লক্ষ্য করে চলেছে ভারতীয় সেনার মর্টার, রকেট লঞ্চার এবং ড্রোন হামলা। শনিবারও জঙ্গি ঘাটি লক্ষ্য করে ঘন ঘন হামলা চালিয়েছে সেনা। জঙ্গিরাও পাহাড়ের নিরাপদ আশ্রয় থেকে পাল্টা গুলি চালাচ্ছিল। রবিবার ভোরবেলা পর্যন্ত দুপক্ষের গুলির লড়াই চললেও তারপর থেকে পালটা জবাব আসেনি জঙ্গিদের তরফে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, আগেই গোয়েন্দাসূত্রে খবর মিলেছিল, অনন্তনাগের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা কোকেরনাগ জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তোইবার বেশ কয়েকজন জঙ্গি। ভারতীয় সেনার ওপর হামলার ছক কষেছে তারা। সেই মতোই সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ায় সেনা। জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে গিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় ভারতীয় সেনাদের। কোকেরনাগ জঙ্গল ভারতীয় সেনা ঘিরে ফেললে জঙ্গিরা আশ্রয় নেয় উঁচু পাহাড়ের গুহায়। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পাহাড়ি এবং দুর্গম অঞ্চলে লড়াই করার জন্য এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অনেক দিন আগেই ওই পাহাড়ে ডেরা বানিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ যে গুহায় তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চালানোর রসদও মজুত করা হয়েছে বলে সেনা মনে করছে। সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েই জঙ্গি সংগঠনটি ঢুকে পড়ে ভারতের সীমানায়।
তা ছাড়া যেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই চলছে, সেই জায়গাটি অত্যন্ত দুর্গম। প্রচন্ড বৃষ্টি ও ঠান্ডার কারণে ভারতীয় সেনার পক্ষে লড়াই চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। ড্রোনের সাহায্যে জঙ্গি ঘাটিটি চিহ্নিত করতে পারলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে পৌছানো সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে তুলনামূলক উঁচু জায়গায় থাকায় জঙ্গিদের লড়াই করতে সুবিধা হচ্ছিল। যে পাহাড়ে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে, সেটি আবার পীর পঞ্জল রেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত। এক দিকে ঘন জঙ্গল, অন্য দিকে গভীর খাদ, ফলে প্রাণ হাতে এগোতে হয়েছে সেনাকে। ফলে জঙ্গিরা এমন একটি জায়গাকে হামলার জন্য বেছেছে, যাতে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে।
রবিবার ভোরের পর থেকে আর শোনা যায়নি গোলাগুলির আওয়াজ। জঙ্গিদের তরফ থেকে কোনও পাল্টা জবাব আসেনি। তা হলে কি সেনার মুহুর্মুহু মর্টার, রকেট লঞ্চার এবং ড্রোন হামলায় মৃত্যু হল জঙ্গিদের? না কি জঙ্গিরা পাহাড় টপকে পালিয়েছে? বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় বলে সেনার এক সূত্রে খবর।