জলপাইগুড়িঃ চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে অবতরণ দেশের ইতিহাসে যেমন একটা নতুন পালক যুক্ত হল, একইভাবে ইসরোর এই টিমের একজন সক্রিয় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জলপাইগুড়ির সন্তান কৌশিক নাগ যুক্ত থাকা শহরের কাছে এক গর্বের বিষয়। ইসরোর টিমের এই সাফল্যে কৌশিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আপ্লুত শহর বাসী থেকে শুরু করে শহরের হলিচাইল্ডস্কুল এবং জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের পর কৌশিক নিজেও ফোনে জানিয়েছেন এই সাফল্যের পর নিজেকে জলপাইগুড়ি বাসিন্দা হিসেবে গর্ব অনুভব করছেন। অন্যদিকে কৌশিকের এই সাফল্যের পর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁর মা সোনালী নাগ থেকে শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং হোলিচাইল্ড স্কুলের প্রাক্তনীদের অ্যাসোসিয়েশন।
জলপাইগুড়ি শহরের তরুনদল এলাকার বাসিন্দা কৌশিক নাগ। তাঁর ছাত্র জীবনের পুরোটাই জলপাইগুড়িতে। কৌশিকের স্কুল জীবন হোলিচাইল্ড স্কুল থেকে। ২০০৯ সালে হোলিচাইল্ড স্কুল থেকে তাঁর আইসিএসসি এবং ২০১১ সালে আইএসসি পাশ করেন। এরপর জয়েন্ট এনট্রান্সের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে থেকে পাস আউট হন কৌশিক। এরপর তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস) থেকে। সেখানে কিছু দিন চাকরির পর তিনি পরবর্তীতে যোগদান করেন দামোদার ভ্যালি কর্পোরেশনে। এরপর ২০১৮ সালে কৌশিক যোগ দেন ইসরোতে। চন্দ্রযান-৩ তৈরির শুরুর দিন থেকেই ইসরোর টিমে কাজ করে চলেছেন কৌশিক। তাঁর কথায় প্রথমে চাকরিতে যোগদানের পরে চন্দ্রযান-৩ এর ওপর একটি প্রজেক্ট তাঁকে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় এই কাজ করা।
এদিন চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদের মাটিতে অবতরণের সময় বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্ছাসের মাঝে কৌশিককে দেখা যায়। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হতেই একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তার কমেন্ট আসতে শুরু করে। এদিন কৌশিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আজ আমি জলপাইগুড়িবাসী হিসেবে ইসরো টিমের একজন সদস্য হয়ে গর্ববোধ করছি। চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের পর আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। আমাদের টিমের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম আজ সফল। দেশবাসীর শুভেচ্ছাতেই এটা আজ সফল হয়েছে। মা, স্ত্রী থেকে শুরু করে স্কুলের বন্ধু, প্রাক্তনী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’
কৌশিক যে সময় হোলিচাইল্ড স্কুলে পড়তেন তখন প্রন্সিপাল ছিলেন সিস্টার ক্রিস্টিন। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্কুলে ছিলাম সেই সময় কৌশিক আমার ছাত্র ছিল। কৌশিকের সাফল্যে ওর শিক্ষক হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। এটা হোলিচাইল্ড স্কুল এবং জলপাইগুড়ি শহরের গর্বের বিষয়। ওকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।‘ হোলিচাইল্ড স্কুলের প্রাক্তনীদের অ্যালুমিনি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ ঘোষ বলেন, ‘যখন স্কুলের প্রাক্তনীদের গ্রুপ থেকে জানতে পারলাম চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের পেছনে আমাদের স্কুলের কৌশকেরও অবদান রয়েছে তখন সত্যি খুবই আনন্দ হচ্ছিল। আমি আপ্লুত ওর এই সাফল্যে। ফোন করে ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। পুজোর সময় জলপাইগুড়ি আসার কথা রয়েছে। তখন অবশ্যই অ্যালুমিনি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওকে এই সফলতার জন্য সংবর্ধনাজ্ঞাপন করা হবে।’
ছেলের এই সাফল্যে খুশি মা সোনালী নাগ। তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই বিষয়টি জানতাম। সেই মতো টিভিতে চোখ রেখে ছিলাম। যখন ঘোষণা হল চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে সফল অবতরণ করেছে সেই মুহূর্তে ছেলের সাফল্যের কথা ভেবে আনন্দে চোখে জল চলে এসেছিল। পরে কৌশিক আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল।’ জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় বলেন, ‘কৌশিকের চন্দ্রযান-৩ অভিযানে অংশ নেওয়ার এই সাফল্য আমাদের কলেজের কাছে খুবই গর্বের বিষয়। জলপাইগুড়ি এলে ওকে আমরা সংবর্ধনা দেব। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসূত্রে জানা গিয়েছে কেবল কৌশিকই নন, চন্দ্রযান-৩ এর ইসরোর টিমে ওই কলেজের ১৯৯৭ সালের মেকানিক্যাল বিভাগের অমরনাথ নন্দী এবং ২০০৪ সালের ব্যাচের সুজয় দলুই নামেও দুই প্রাক্তনী রয়েছেন।