উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ৩৪ বছরের চাকরিজীবনে ৭১ বার বদলি হয়েছেন আইএএস প্রদীপ কাসনি। অবসর নেওয়ার আগে শেষ ছ’মাস বেতনই পাননি। তবে চাকরি জীবনের সততার জন্যই পরিচিত হয়েছেন প্রদীপ। জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সালে হরিয়ানার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করে অফিসার হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে হরিয়ানা সরকারের কাজে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে তিনি আইএএস হন। কর্মজীবনে বার বার বদলি হয়েছেন প্রদীপ। অভিযোগ, এমন জায়গায় বদলি করা হয়েছিল তাঁকে, যে দপ্তরের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। সেখানে বসার জন্য চেয়ার পর্যন্ত ছিল না। আটকে দেওয়া হয়েছিল তাঁর বেতন, ভাতা। এই নিয়ে মামলা করেছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে প্রদীপের পোস্টিং হয়েছিল হরিয়ানার ল্যান্ড ইউজ বোর্ডের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি পদে। বদলির পরেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা গন্ডগোল রয়েছে। তিনি দেখেন, ওই বোর্ডে না রয়েছে কোনও নথি, না কোনও ফাইল। এমনকি কোনও কর্মীও ছিলেন না। এর পরেই সন্দেহ হয় তাঁর। তিনি আরটিআই করেন। তাতে দেখা যায়, দীর্ঘ দিন আগেই ওই বোর্ড প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তার পরেও কেন তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই নিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন প্রদীপ। সেই নিয়ে মামলা চলে। শুনানিতে জানা যায়, হরিয়ানার পরিবেশ দপ্তরের অধীনে প্রথম ল্যান্ড ইউজ বোর্ড চালু করা হয়েছিল। পরে তা কৃষি দপ্তরের অধীনে আনা হয়েছিল। কৃষি দপ্তর পরে প্রস্তাব দেয় এই বোর্ড তুলে নেওয়ার। সেই প্রস্তাবে সায় দেয় রাজ্য সরকার। ২০০৮ সালেই রদ হয় ল্যান্ড ইউজ় বোর্ড।
সেই মামলা অবসরের পরেও চালিয়েছিলেন প্রদীপ। তাঁর স্ত্রী নীলম কাসনিও সরকারি কর্মী ছিলেন।
হরিয়ানার রাজ্যপালের অ্যাসিসট্যান্ট ডেপুটি কমিশনার হিসাবে কাজ করেছিলেন। ২০১৭ সালে অবসর নেন তিনি। অভিযোগ, ক্ষমতায় যখন কংগ্রেস ছিল তখনই সব থেকে বেশি বদলি হয়েছিলেন প্রদীপ। তবে বিজেপি আমলেও ছবিটা প্রায় একই ছিল। ২০১৪ সালে হরিয়ানায় ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মনোহর লাল খট্টর। তার পর থেকে ১২ বার বদলি হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরেই বদলি হয়েছিলেন তিন বার।
তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস সরকার তাঁর দপ্তরে তাঁকে না জানিয়েই নিয়োগ করছিল।
তিনি প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু তিনি সে রকম কোনও নির্দেশ দেননি। তা হলে তিনি কেন সেই নিয়োগ মানবেন। ফাইলগুলিকে কীভাবে দেখা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দিতে চান মন্ত্রীরা। ২০১৮ সালে অবসর নেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, সহকর্মী আমলারা যদি তাঁর পাশে থাকতেন, তা হলে পরিস্থিতি অনেকটাই অন্যরকম হত।