ময়নাগুড়িঃ মহাসড়কের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার (Lakshmir Bhandar) প্রকল্পের প্রচুর আবেদনপত্র৷ রবিবার সাত সকালে রাস্তার পাশে এমন আবেদন পত্র পড়ে থাকতে দেখে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ময়নাগুড়ি রোডে নব নির্মিত উড়ালপুল সংলগ্ন উল্লাডাবড়িতে৷ আবেদনপত্র গুলি কোচবিহার ২ নাম্বার ব্লকের ঢাংডিংগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মহিলাদের। কিভাবে কোচবিহার থেকে এত দূরে এই স্থানে আবেদনপত্র গুলি এলো তা স্পষ্ট নয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিত কুন্ডু। পরে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ এসে রাস্তার পাশ থেকে আবেদনপত্র গুলি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা।
কোচবিহার ২ ব্লকের বিডিও বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, “আবেদন পত্র গুলি বাইরে যাওয়ার কথা নয়। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অফিসের কর্মীদের ভুমিকা নিয়েও তদন্ত করা হবে।”
রবিবার সকালে প্রত:ভ্রমনে বেড়িয়ে এলাকার বাসিন্দারা ইষ্ট-ওয়েষ্ট করিডরের পাশে ময়নাগুড়ি উল্লাডাবড়ি এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকতে দেখেন লক্ষ্মীর ভান্ডারের শ’য়ে শ’য়ে আবেদনপত্র। মনে করা হচ্ছে উড়ালপুলের ওপর থেকে আবেদন পত্র গুলি ফেলার চেষ্ঠা হয়েছে। আবেদনপত্র গুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আবেদনকারির ছবি, আধারকার্ড, ভোটারকার্ড, ব্যাঙ্ক পাশবই এর ফটো কপি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি। হাওয়ায় বেশ কিছু আবেদনপত্র আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য বেশকিছু আবেদনপত্র নষ্টও হয়ে যায়৷ এরপরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুবির সাহা গোটা বিষয়টি প্রশাসনের কর্তাদের জানান। বিডিওর পাশাপাশি হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ ও ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বিডিও নিজেও রাস্তা থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র গুলি কুঁড়োতে শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক আবেদন পত্র উদ্ধার হয়। ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। রোড এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সুবির সাহা বলেন, “এত সংখ্যক লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র রাস্তায় ছড়িয়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পথ চলতি বহু মানুষ গাড়ি দাঁড় করিয়ে একটি দুটি করে আবেদন পত্র নিয়েও যায়।”
ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুন্ডু বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি বেশ কিছু লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র পরে আছে। পুলিশের হাতে সব আবেদনপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।” ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল চন্দ্র দাস বলেন, “আবেদনপত্র গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনপত্র গুলি কোচবিহার দুই নাম্বার ব্লকের ঢাংডিংগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় বোকালির মাঠে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে আবেদন পত্র গুলি জমা নেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি আবেদন পত্রের ওপর জমা নেবার সরকারি নাম্বার লেখা রয়েছে। ঢাংডিংগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে বিজেপির দখলে। রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা আবেদন পত্র গুলির আবেদনকারীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হলে গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ।
এক আবেদককারী প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, “কমপক্ষে চারবার লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত টাকা পাইনি। আমাদের ধারনা ইচ্ছাকৃত আমাদের আবেদনপত্র গুলি কেউ সরিয়ে দিচ্ছে।” টিংকু রায় নামে আরও এক আবেদনকারী বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সব সময় অনেক কথা শুনে থাকি। কিন্তু আমরা একাধিক আবেদন করেও কোনও অজ্ঞাত কারনে এই প্রকল্পের সুবিধা পাইনি। এখন শুনছি আমাদের আবেদন পত্র রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।”
এই ঘটনায় অবশ্য ওই ঢাংডিংগুড়ি অঞ্চল তৃণমুল সভাপতি অমিত দাস বলেন, “ওই গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপির দখলে। আমাদের ধারনা রাজ্য সরকারের বদনাম করতে বিজেপির কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাম্পি সরকার দাসের বক্তব্য, “দুয়ারে সরকারের দায়িত্বে থাকেন সরকারি কর্মীরা। তারাই আবেদন পত্র সংগ্রহ করে জমা করেন। তাই এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের নাম জড়ানো ঠিক না।”