নয়াদিল্লি: আবারও বিতর্কে নয়াদিল্লির প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহালয়। এবার সংগ্রহালয়ের আলেখ্যাগার বা আর্কাইভ থেকে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া একটি দুস্প্রাপ্য চিঠি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগল দেশের প্রধান শাসক দল বিজেপি। কেন্দ্রীয় সূত্রে দাবি, ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর, অর্থাৎ স্বাধীনতার দু মাসের মাথায় ওই চিঠিটি লিখেছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বল্লভভাই পটেলের উদ্দেশ্যে লেখা ওই চিঠিতে জওহরলাল খোলাখুলি নির্দেশ দিয়েছেন, দিল্লির আশেপাশের অঞ্চলে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বেছে বেছে মসজিদ ও ঈদগাহ ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। যদি কোনও হিন্দু অঞ্চলে বলপূর্বক কোনও মসজিদ ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়, তবে কাউকে যেন রেয়াত না করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে কড়া হাতে এই ধ্বংসসাধন রুখতে পদক্ষেপ নেওয়া এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে গোটা অঞ্চলবাসীকে শাস্তি দেওয়া ও মোটা জরিমানা করার নির্দেশ দিয়েছেন নেহেরু।
শাসক শিবিরের তরফে জারি একপাতার ওই চিঠি (যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) তে দেখা গেছে, ১৭ ইয়র্ক রোড অর্থাৎ অধুনা মতিলাল নেহেরু মার্গ স্থিত প্রধানমন্ত্রীর আবাস থেকে বল্লভভাই পটেলকে ওই চিঠি লিখছেন জওহরলাল। চিঠিতে বল্লভভাইকে ‘মাই ডিয়ার বল্লভভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন নেহেরু। সেই চিঠিতে দেশের সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থল মসজিদ বা ঈদগাহ ধ্বংস করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেহেরু। স্বাধীনোত্তর ভারতে আর্য সমাজ ও হিন্দু মহাসভার মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, উত্তর দিল্লির কুঁচা খান চান্দ অঞ্চলে একটি মসজিদ ভেঙে মন্দির বানানো হয়েছে এবং তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী মৌলানা আজাদের হাতে গড়ে ওঠা একটি লাইব্রেরিও লুটপাট হয়েছে। নিত্যদিন এমন অজস্র ঘটনার কথায় ক্ষুব্ধ নেহেরু নির্দেশ দিচ্ছেন, শক্ত হাতে এই বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করা দরকার। প্রয়োজনে কোনও মহল্লায় যদি মসজিদ ধ্বংস করার অভিযোগ আসে, তবে গোটা মহল্লাবাসীকে শাস্তিদান হেতু মোটা জরিমানা আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন নেহেরু। গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধিদের মতে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অনৈতিক; সংখ্যালঘু তোষণের জন্য নেহেরু নির্দোষ হিন্দুদের শাস্তিদান করেছেন। এও বলা হয়েছে, এতদিন পর্যন্ত এই বিতর্কিত চিঠি গোপন করে রেখেছিল কংগ্রেস সরকার, সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে আসায় সেই চিঠিকে নব্য নির্মিত পিএম মিউজিয়ামেই ঠাঁই দিয়েছে মোদী সরকার। সম্প্রতি, দিল্লির নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন এটি প্রধানমন্ত্রী জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নামে পরিচিত। নেহরু মেমোরিয়ালের নাম পরিবর্তন করায় মোদি সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, সংকীর্ণতা ও প্রতিহিংসার অপর নাম মোদি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৬ সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনমূর্তি কমপ্লেক্সে ভারতের সমস্ত প্রধানমন্ত্রীদের জন্য নিবেদিত একটি জাদুঘর স্থাপনের ধারণা করেছিলেন। ২৫ নভেম্বর ২০১৬-এ মিউজিয়ামের কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৬২তম সভায় এটি অনুমোদিত হয়েছিল। এখন এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর যাদুঘরটি ২১ এপ্রিল ২০২২-এ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এর নাম পরিবর্তন করা নিয়ে উত্তপ্ত হয় কেন্দ্রীয় রাজনীতি। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, ‘৫৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে, নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম এবং লাইব্রেরি একটি বিশ্বব্যাপী বুদ্ধিবৃত্তিক ল্যান্ডমার্ক এবং বই এবং রেকর্ডের একটি ভান্ডার হয়েছে। এখন থেকে এটিকে প্রধানমন্ত্রীর জাদুঘর ও সোসাইটি বলা হবে। ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রের স্থপতির নাম এবং উত্তরাধিকারকে অপমান, হেয় ও ধ্বংস করতে প্রধানমন্ত্রী মোদি কী করবেন না? নিজের নিরাপত্তাহীনতার ভারে ভারাক্রান্ত একজন ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বঘোষিত বিশ্বগুরু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’ তারই পালটা জবাবে, এবার পূর্বতন নেহেরু মিউজিয়ামে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বিতর্কিত চিঠির প্রদর্শনী করে সেই উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলল বিজেপি। কংগ্রেসের তরফে এই পদক্ষেপকে তীব্র কটাক্ষ ও সমালোচনা করা হয়েছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে ওস্তাদ বিজেপি। কবর খুঁড়ে না জানি কত কিছু বের করে আনবে তাঁরা। অথচ দেশ জ্বলছে, মণিপুর জ্বলছে, বুলডোজার সন্ত্রাস চলছে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ‘মৌনীবাবা’ হয়ে বসে আছেন। সে বেলায় কেন বিজেপি চুপ?’