চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: রাস্তা করতে চেয়েও করতে পারছে না কোচবিহার জেলা পরিষদ। কারণ জেলা পরিষদের রাস্তার কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে না কোনও ঠিকাদারি সংস্থা। পথশ্রী প্রকল্পে ১০৭টি রাস্তা করার কথা জেলা পরিষদের। তারমধ্যে অন্তত ৭০টি রাস্তার জন্য প্রথমবার টেন্ডার ডেকেও কোনও বিডার পায়নি তারা। এই অবস্থায় রাস্তার কাজের জন্য তারিখ পরিবর্তন করে পুনরায় টেন্ডার করা হয়েছে। তাতেও টেন্ডার সম্পূর্ণ হয়নি। তাই সেই রাস্তাগুলো করতে দ্বিতীয়বার টেন্ডার করা হয়েছে।
এবার কী হবে? সাড়া মিলবে কি? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কোচবিহারে। কারণ, এই টেন্ডারের জালে আটকে গিয়ে যদি লোকসভা ভোট ঘোষণা হয়ে যায়, তবে আবার নির্বাচনি বিধির আওতায় পুরো প্রকল্পটাই আটকে যাবে। কোচবিহার জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্তনারায়ণ বলেন, ‘একটু দেরি হয়েছে। তবে চলতি মাসের ২৮-২৯ তারিখের মধ্যে সব টেন্ডার হয়ে যাবে। ১ মার্চ থেকে বাকি রাস্তার কাজ শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে।’
তবে প্রশ্নটা হল, কাজের বরাত নিতে ঠিকাদারেরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেন। কোচবিহার জেলা পরিষদের কাজ করা ঠিকাদারি এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল মূল আপত্তি দর নিয়ে। পথশ্রী প্রকল্পের কাজের জন্য কোচবিহার জেলা পরিষদ যে দর রেখে এস্টিমেট করেছে, তাতে তাঁদের পোষাচ্ছে না। পথশ্রী প্রকল্পে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ ধরছে। সেখানে জেলা পরিষদ প্রতি কিলোমিটারে ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ ধরেছে। রাস্তা তৈরির সামগ্রীর দাম বেড়েছে। আর রাস্তা তৈরির বরাদ্দ কমেছে। তাই আগ্রহী নয় বহু এজেন্সি।
এ তো গেল একটা কারণ। কারণ আরও আছে। জেলা পরিষদের পুরোনো একাধিক কাজের সুবাদে কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বহু এজেন্সির। তার মধ্যেই আবার এই প্রকল্পের কাজ করলে সময়মতো টাকা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযোগ, গ্রামে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় অনেককে টাকা দিতে হচ্ছে। না দিলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া কাজ বন্ধের হুমকি তো রয়েছেই।কথা হচ্ছিল এমনই এক ঠিকাদারি এজেন্সির প্রতিনিধি নিরঞ্জন দে’র সঙ্গে। বললেন, ‘জেলা পরিষদ থেকে অন্যান্য সব দপ্তরে কিলোমিটার প্রতি এস্টিমেট অনেক বেশি। এদের তো সেই ২০১৭ সালের এস্টিমেট এখনও রয়েছে। তারমধ্যে এখানে আবার পেমেন্ট নিয়েও সমস্যা রয়েছে।’
সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফোন করে কোচবিহার জেলার বাসিন্দারা পথশ্রী প্রকল্পে ২২২ কোটি টাকার রাস্তা আদায় করেছিল। সবমিলিয়ে জেলায় ৬০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ দ্রুত শুরু করতে চেয়েছে প্রশাসন। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগেই তা শুরু করার লক্ষ্য ছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় পথশ্রী প্রকল্পে সবমিলিয়ে এবার ৩২৭টি রাস্তার কাজ হবে। তারমধ্যে জেলা পরিষদ করবে ১০৭টি রাস্তা। তবে রাজ্যের নির্দেশ ৯ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনও ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারবে না বলে প্রথমে জানানো হয়। সেই সময়ের মধ্যে ১০৭টি রাস্তার মধ্যে মাত্র ২৮টি রাস্তার ই-টেন্ডার করতে পেরেছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। বাকি সবই আটকে রয়েছে। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে টেন্ডার সম্পূর্ণ করে ওয়ার্ক অর্ডার না দিতে পারলে জেলা পরিষদ বিপাকে পড়তে পারে।