সমীর দাস, হাসিমারা: হস্টেল (Hostel) থেকে পালানো দুই খুদে ছাত্রীকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রীরা হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার এই ঘটনায় হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ মানতে চায়নি।
কালচিনি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি ফর গার্লস স্কুলের ওই দুই পড়ুয়ার মধ্যে একজন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, আরেকজন ষষ্ঠ শ্রেণির। দুজনের বাড়ি মাদারিহাটের রাঙ্গালিবাজনার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি গ্রামে। সাতালি চা বাগানের বাসিন্দা মীরা ঘোষের দাবি, তিনি হ্যামিল্টনগঞ্জ থেকে টোটোতে হাসিমারা ফিরছিলেন। পথে হ্যামিল্টনগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে গুদামডাবরি রেলগেট এলাকায় দুই খুদেকে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তাদের কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তিনি তাদের পুরোনো হাসিমারায় নিয়ে আসেন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দা তথা সাতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মনোজ বড়ুয়াকে তিনি ঘটনার বিষয়ে জানালে ছাত্রীদের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে অভিভাবকদের ফোন করেন প্রধান। অভিভাবকরা বিষয়টি স্কুলে জানালে হস্টেল ওয়ার্ডেন বর্ষা লামা সেখানে আসেন। এরপর তিনি দুই ছাত্রীকে হস্টেলে নিয়ে যান।
বর্ষার দাবি, সন্ধ্যায় ছাত্রীদের রোলকল (Roll Call) করা পর্যন্ত ওরা হস্টেলেই ছিল। পরে কোনও ফাঁকে দুজন হস্টেলের গেট (Gate) টপকে পালিয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ বাদে ঘটনার বিষয়ে টের পেয়ে ছাত্রীদের খোঁজ শুরু হয়। তাঁরা পুলিশকে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ছাত্রীদের অভিভাবকরা (Guardian) ফোন করে পুরানো হাসিমারায় দুই ছাত্রী রয়েছে বলে তাঁদের জানান।
মনোজ বলেন, ‘এটা স্কুল ও হস্টেল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি। দুটো বাচ্চা মেয়ে হস্টেল ছেড়ে চলে গেল আর কেউ টের পেলেন না? রাস্তায় মধু ফরেস্ট পড়ে। ওই রাস্তায় হাতি বের হয়। তাছাড়া দুই ছাত্রী অপহৃত হতে পারত।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা (Head Mistress) অনিন্দিতা সরকারের কথায়, ‘হস্টেলে ছাত্রীদের ওপর সব সময় নজর রাখা হয়। সন্ধ্যার রোলকলের পর আবাসিক ছাত্রীদের টিফিনের ব্যবস্থা চলছিল। সেই ফাঁকে দুজন পালিয়ে গিয়েছিল। অভিভাবকরা এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখছি।’
এদিকে দুই ছাত্রী লোকজন দেখে কেঁদে ফেলে। তারা জানায়, মায়ের কথা মনে পড়ছিল, তাই বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। কালচিনি থেকে রাঙ্গালিবাজনার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রাতের অন্ধকারে তারা হেঁটে এতদূর কীভাবে যাবে সেবিষয়ে ওই দুই খুদের ধারণা নেই। পুরোনো হাসিমারার বাসিন্দারা মীরা ঘোষের প্রশংসা করেছেন। তাঁর জন্যই বড় বিপদের হাত থেকে খুদেরা রক্ষা পেল বলে তাঁদের বক্তব্য।
এক ছাত্রীর বাবা ফোনে জানান, কী কারণে মেয়েরা হস্টেল ছেড়েছিল তা তিনি জানেন না। শনিবার হস্টেলে গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন।