বালুরঘাটঃ ভিড়ে ঠাসা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতাল। প্রতিটি ওয়ার্ডেই অসংখ্য রোগী ও রোগীর আত্মীয়। তারই মধ্যে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে সারমেয়র দল। শুধু ঘুরে বেড়ানই নয়, কখনও কখনও তাদের দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে। সব দেখেও হুঁশ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। উলটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, ‘ওয়ার্ডে কুকুরের আনাগোনার বিষয়টি মানতে পারলাম না’।
রাজ্যের একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সেরার তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে সারমেয়দের। মেল ওয়ার্ড, ফিমেল ওয়ার্ড সহ মূলত দোতলায় ও তিনতলায় কুকুরদের অবাধ আনাগোনা নজরে পড়ছে। এমনকি ওয়ার্ডের সামনের প্যাসেজে থাকা অব্যবহৃত বেডের ওপরেও নির্বিঘ্নে কুকুরদের শুয়ে থাকতে দেখছেন রোগীর পরিজনরা।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রোগীরা বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালের উপরেই মূলত নির্ভর করেন। অসুস্থতা বোধ করলেই প্রথমে হাসপাতালের পুরোনো আবাসনের জরুরি বিভাগে যান রোগী ও পরিজনরা। তারপর প্রয়োজন অনুসারে একতলা থেকে দোতলায় যেতে রয়েছে র্যাম্প। যা দিয়ে অনায়াসে বয়স্ক মানুষরা হুইল চেয়ার করে অথবা স্ট্রেচারে যেতে পারেন নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে। আর এখান দিয়েই হাসপাতাল চত্বরের কুকুর অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে হাসপাতালের দোতলা অথবা তিনতলায়। কুকুরের অবাধা আনাগোনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা দেখে ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের পরিজনেরা।
যে হাসপাতাল রাজ্যের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবায় সেরার শিরোপা পায়, সেখানে এই ছাব যে একেবারেই বেমানান, তা এক কথায় সকলেই স্বীকার করছেন। পতিরাম থেকে অসুস্থ কাকাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন রানা শেখ। তাঁর কথায়, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ডে সদর্পে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। তিনতলার একেবারে কোণায় এই কুকুরদের আনাগোনা বেশি। ওয়ার্ডের সামনের প্যাসেজে পুরোনো ভাঙাচোরা কিছু বেড রাখা আছে। তার ওপরেই কুকুর বসে থাকছে ও এক বেড থেকে আরেক বেড়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।’
বালুরঘাটের বাসিন্দা সুবল বর্মন বলেন, ‘এক আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। অসুস্থতার কারণে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল। কিন্তু ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। এদের তো আর রেবিজ ইনজেকশন দেওয়া নেই, যে কামড়ালে জলাতঙ্ক হবে না। এখানে চিকিৎসা করাতে এসে কেউ অসুস্থ না হয়ে পড়ে, এটাই আতঙ্কের।
স্বামীর চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন জবেদা বিবি। তাঁর অভিযোগ, ‘হাসপাতালে কুকুর ঘুরে বেড়ানোর মতো অবস্থা মোটেই কাম্য নয়। কখনও ওয়ার্ডেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অবাক হয়েছি এই দেখে যে কোনও হাসপাতালের কর্মী এই কুকুরদের তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বিষয়টি ভীষণই হতাশাজনক।”
যদিও হাসপাতালের ভিতরে কুকুর ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি মানতে নারাজ বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগ। তাঁর সাফাই, ‘ওয়ার্ডগুলি প্রচুর রোগীতে ঠাসা। সেখানে কুকুর ঘুরে বেড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের চাপ আছে জানি। তার মধ্যে থেকে ভালো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে। অভিযোগ আসা ভালো, আমি খোঁজ নেব। কিন্তু ওয়ার্ডের সামনে কুকুরের আনাগোনা বিষয়টি মানতে পারলাম না’।