উত্তরবঙ্গে একের পর এক সরকারি লাভজনক সংস্থা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই সংস্থাগুলির দিকে একটু নজর দিলে, একটু পরিকল্পনামাফিক চালানোর চেষ্টা হলে ফুলেফেঁপে উঠতে পারত। হতে পারত বাড়তি কর্মসংস্থানও। কিন্তু উত্তরবঙ্গের দুর্ভাগ্য, সেদিকে কারও নজর পড়ছে না। যার ফলে তিলে তিলে নষ্ট হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সরকারি সম্পদ।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ সরকারি সংস্থা ছিল হিমুল। উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় হিমুলের দুধের আকাশচুম্বী চাহিদা ছিল। হিমুলের ক্যাটল ফিড অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। পাহাড়-সমতল মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় ক্যাটল ফিডে উৎপাদিত গোখাদ্য বিক্রি হত। যারও ভালো চাহিদা ছিল। কিন্তু সরকারি নজরদারির অভাবে বাম আমল থেকেই ধুঁকতে শুরু করে হিমুল। বাজারের চাহিদার অর্ধেক দুধও জোগান দেওয়া যাচ্ছিল না। দুধ বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছিল।
২০১১ সালে রাজ্যে সরকার বদলের পর হিমুল বন্ধ করে মাদার ডেয়ারির হাতে মাটিগাড়ার ওই প্রকল্প তুলে দেওয়া হয়। মাল্লাগুড়ির হিমুল ক্যাটল ফিডও বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাটল ফিডের সমস্ত যন্ত্রপাতি, কারখানার কাঠামো বিক্রি করে দেয় প্রশাসন। মাল্লাগুড়িতে ক্যাটল ফিডের আট একর জমি ছিল। ক্যাটল ফিড উঠে যাওয়ায় সেই জমিতে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। সেইমতো বোর্ড ঝোলানো হয়। পাঁচ একর জমি বাসস্ট্যান্ডের জন্য পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়।
কিন্তু তাহলে বাকি জমি গেল কোথায়? জানা গিয়েছে, ইচ্ছে করেই প্রায় তিন একর জমি পাঁচিলের বাইরে রাখা হয়েছে। এখন ওই জমি কোনও প্রোমোটারের হাতে তুলে দিয়ে মাফিয়ারা মোটা টাকা লুটে নেওয়ার ফন্দি আঁটছে। অন্যদিকে, হিমুল বন্ধ করে যে মাদার ডেয়ারিকে মাটিগাড়ার প্রকল্প তুলে দেওয়া হয়েছিল, তারা বেশিদিন চালায়নি। বর্তমানে বেঙ্গল ডেয়ারির হাতে রয়েছে ওই প্রকল্প। হিমুলের কর্মীরা অবসরের পর সমস্ত পাওনা বুঝে পাননি।
উত্তরবঙ্গের বাজারে বর্তমানে ছয়-সাতটি সংস্থা চুটিয়ে দুধের ব্যবসা করছে। অথচ চক্রান্ত করে হিমুলকে ধ্বংস করা হল। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কেউ কেউ মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা আর নজরদারি থাকলে হিমুল উত্তরবঙ্গে সরকারের সবচেয়ে বড় লাভজনক সংস্থা হত।
একই অবস্থা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি)। নিগমের পরিচালনা নিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতি বাম আমলে শুরু হয়। ২০১১ সালে সরকার বদলের পর অবশ্য নিগমকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো লজঝড়ে বাস সরিয়ে নতুন নতুন বাস আনাই শুধু নয়, জেএনএনইউআরএম সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সৌজন্যে নিগমে বাম আমলের তুলনায় গত ১০ বছরে কয়েকগুণ বাস বেড়েছে। বর্তমানে চারটি ডিভিশন মিলিয়ে নিগমের হাতে ৭৪৫টি বাস রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০০ বাস রাস্তায় চলে। প্রতিটি বাসে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
তারপরেও কর্মীদের বেতনের ৯০ শতাংশ রাজ্য সরকারকে ভরতুকি দিতে হচ্ছে কেন? এত বাস চলছে, এত যাত্রী হচ্ছে, তারপরেও কেন প্রতি মাসে সরকার ভরতুকি না দিলে কর্মীদের বেতন হবে না? নিগমের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া না বাড়ালে লাভের মুখ দেখা কঠিন। প্রতি কিলোমিটার বাস চালাতে যা খরচ হয়, যাত্রীভাড়া দিয়ে তা উঠছে না। সব জেনেবুঝে সরকার ভরতুকি দিয়ে চলেছে।
প্রশ্ন উঠছে, শুধু ভাড়া না বাড়ানোই কি লোকসানের কারণ? প্রতিদিন প্রতি রুটে বাস চালিয়ে যাত্রীভাড়ার কত টাকা চুরি হয়? আমার নিজের দেখা এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যেখানে যাত্রীদের টিকিট না দিয়ে পুরো ভাড়াটাই কনডাক্টরের পকেটে ঢুকছে। বাস গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে সেই টাকার ভাগ বাসের চালকের কাছেও পৌঁছে যায়। এভাবে পুকুরচুরি হলে কীভাবে একটা সংস্থা বাঁচবে বলতে পারেন? এভাবে চলতে চলতে একদিন এনবিএসটিসির অবস্থাও হিমুলের মতো হবে।
বিধাননগরের আনারসের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এখানকার আনারস চাষের আরও উন্নয়ন, ফল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কয়েকশো কোটি টাকায় প্রায় ২০ বছর আগে আনারস উন্নয়ন কেন্দ্র হয়েছিল। সেখানে হিমঘর, আড়ত, আবাসন থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবস্থা করা হলেও আজ পর্যন্ত সেটি চালুই করা হল না। হলে এখানেও প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারত।
উত্তরবঙ্গ বলেই কি এত বঞ্চনা? বামেরা উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করেছে বলে অভিযোগ বহুবার উঠেছে। রাজ্যে সরকার বদলের পরেও কি বঞ্চনা দূর হয়েছে?
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনে রেড কার্পেটে নজর কাড়লেন বলিউড…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফের তীব্র গরমে পুড়ছে রাজ্যবাসী। শনি ও রবিবার উত্তর ও দক্ষিণ…
শিলিগুড়ি: সন্তান জন্মের পর থেকেই বাড়ির বৌকে যৌন ব্যবসায় নামানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন খোদ স্বামী…
শিলিগুড়ি: স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই গৃহবধূকে অত্যাচারের অভিযোগ শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে। দুই কন্যা সন্তান…
মানিকচক: তৃণমূল (TMC) অঞ্চল সভাপতিকে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের (Congress) বিরুদ্ধে। মালদার মানিকচকের…
This website uses cookies.