নয়াদিল্লি: ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম কুচক্রী তাহাউর রানাকে দেশে ফেরানো নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ল বিজেপি ও কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সাফ কথা, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গি হামলার ষড়যন্ত্রীদের বিচার করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রেখেছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার জঙ্গিদের ব্যাপারে নরম মনোভাব দেখিয়েছিল। আজমল কাসভকে তারা বিরিয়ানি খাইয়েছিল।’ বিজেপির আক্রমণের জবাবে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করেছেন, ‘মোদি সরকার মোটেও তাহাউর রানাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেনি। বরং পূর্বতন ইউপিএ আমলে যে পরিণত, ধারাবাহিক এবং কৌশলপূর্ণ কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তারই জেরে তাহাউরকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। মোদি সরকার শুধুমাত্র ইউপিএ সরকারের কাজের সাফল্য পেয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ মার্কিন মুলুক থেকে বিশেষ বিমানে নয়াদিল্লি আনা হয় মুম্বই হামলার অন্যতম কুচক্রীকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ ১৭ বছরের কূটনৈতিক ও আইনি জট কাটিয়ে শেষমেশ তাহাউরকে ফিরিয়ে আনার পর থেকেই যাবতীয় কৃতিত্ব মোদি সরকারের বলে দাবি করতে শুরু করেছে বিজেপি। পীযূষ গোয়েল বলেন, ‘কংগ্রেস জমানায় তাজ হোটেলে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল। তাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কিছুই করেনি। মোদিজির সংকল্পের জন্যই দোষীদের বিচারের সামনে দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে। মুম্বইয়ের মানুষ মোদিজির কাছে কৃতজ্ঞ।’ অপরদিকে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধিকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস আমলে কাসভ বা তাহাউর রানারা এসে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসেছিল। কংগ্রেস জমানায় প্রায়ই বিস্ফোরণ হত। আর মোদি জমানায় যারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ ইন্ডিয়া জোটের শরিক শিবসেনা (ইউবিটি)-র বিরুদ্ধেও তোষণের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন গোয়েল। বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের দাবি, ‘কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ যা পারেনি তা করে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটা একটি বিরাট কূটনৈতিক ও ঐতিহাসিক সাফল্য।’
বিজেপির এহেন মোদি বন্দনার বিরোধিতা করে চিদম্বরম বলেন, ‘মোদি সরকার তো তাহাউর রানাকে ফিরিয়া আনার ব্যাপারে কোনওপ্রকার কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুই করেনি। তাকে ফিরে পেতে কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পায়নি তারা। বরং কূটনীতি, আইন বলবৎকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যদি একসঙ্গে কাজে লাগানো যায় তাহলে নিজেদের ঢাক না পিটিয়েই সাফল্য পাওয়া যায়।’ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ‘তাহাউর রানাকে ভারতে ফেরানো হয়েছে এটা জানতে পেরে আমি খুব খুশি। কিন্তু পুরো কাহিনীটা বলা দরকার। মোদি সরকার এই ঘটনার সমস্ত কৃতিত্ব নিতে চাইছে। কিন্তু তাদের বিকৃতির থেকে সত্যিটা অনেকটাই আলাদা।’ কবে থেকে কীভাবে ইউপিএ সরকার তাহাউর রানা, ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা সবিস্তারে নিজের বিবৃতিতে জানিয়েছেন চিদম্বরম। মোদি সরকারকে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচারের সঙ্গে সম্পর্কিত সংবেদনশীল বিষয় কীভাবে সামলাতে হয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল তাহাউরের ঘটনা।’