উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সুস্থ থাকতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের জুড়ি নেই। বিশেষত যাঁদের বয়স ৫০ বছর পেরিয়েছে, তাঁদের অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এজন্য শুধু নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে বা খাবার থেকে শর্করা ও চর্বি কমালেই হবে না, আরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে (Tips)। যা করবেন –
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ আর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০ বছরের বেশি বয়িসদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাই রক্তচাপ, ডায়াবিটিস এবং অন্যান্য রক্তপরীক্ষার পাশাপাশি বয়স্কদের উচিত ভায়া টেস্ট, প্যাপস্মিয়ার বা প্রোস্টেট পরীক্ষা করা। এতে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব। তাই প্রয়োজন রুটিনমাফিক পরীক্ষানিরীক্ষা করা। কোন পরীক্ষা কখন করতে হবে সেটি জানাবেন চিকিৎসক।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
সুষম খাদ্যাভ্যাস শরীরের ওপর বয়সের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এতে করে বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলোও কম দেখা দেয়। একে বলা হয় হেলদি এজিং। টাটকা সবজি, ফল, হোল গ্রেইন ও বাদাম খেলে শরীর সুস্থ থাকবে। তবে সবার শরীরের চাহিদা এক নয়। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শে সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করে নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু এক জাতের নয়, বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ও ফল খেতে হবে।
শরীরচর্চা করুন সাবধানে
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই দেহের সচলতা কমে যায়। তার মূলে আছে পেশিশক্তি কমে যাওয়া এবং অস্থিসন্ধির সমস্যা। বয়স্করা শরীরচর্চা কমিয়ে দেন অথচ তাঁদের জন্য একটানা শুয়ে-বসে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর। শরীরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না, এমন ব্যায়াম যেমন মাঝারি গতিতে হাঁটা, সম্ভব হলে সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, ওয়াটার অ্যারোবিক্স করা যেতে পারে। এতে শরীর আর মন দুটোই চনমনে থাকবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয় কমানো, অস্টিওআরথ্রাইটিসের ব্যথা উপশম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
টিকা নিন
তাপমাত্রার তারতম্য এবং শুষ্ক বায়ু থেকে বয়স্করা সহজেই সর্দিকাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হন। এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে টিকা নেওয়া প্রয়োজন। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে বাঁচতে টিকা নিতে হবে প্রতিবছর। যাঁদের হাঁপানি বা সিওপিডি আছে, তাঁদের নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া উচিত পাঁচ বছর পরপর। যাঁদের ডায়াবিটিস ও হৃদরোগ আছে, তাঁরা যে কোনও অসুখেই কষ্ট পান বেশি। তাই সেসব রোগীদের সংক্রামক রোগের টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সামাজিকতা বাড়াতে হবে
একাকীত্ব একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, ডিমেনশিয়া এবং হৃদরোগের জন্যও সেটি দায়ী। একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা কিছু ক্ষেত্রে অকালমৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। সামাজিকতা বাড়ানোর মাধ্যমে একাকিত্ব দূর করা সম্ভব। পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও আলাপে সময় কাটাতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। প্রয়োজনে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হলেও সামাজিক হতে হবে। একা থাকা যাবে না।
চাই পর্যাপ্ত ঘুম
সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে গড়ে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তবে ৬ ঘণ্টা ঘুমও বয়স্কদের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। ঘুমের ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব দ্রুত স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। মানসিক অবসাদের পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপেরও কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম। নিজের অথবা পরিবারের সুস্থ জীবনযাপনের পথ সুগম ও সুন্দর করতে পারে কিছু সচেতন পদক্ষেপ। জীবনকে নিয়মের মধ্যে আনুন, সুস্থ থাকুন।