মাথাভাঙ্গা: এ যেন বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। শহরজুড়ে লাগানো রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা অথচ সেগুলির কোনটিই কাজ করছে না। বছর তিনেক আগে শহরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে মাথাভাঙ্গা ব্যবসায়ী সমিতি শহরজুড়ে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার সহ ৪৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত না হওয়ায় বিগত দু’বছর ধরে সেগুলির সবক’টিই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এরফলে চুরি বা অন্য কোনও অপরাধমূলক কাজের ক্ষেত্রে শহরের চৌপথি, পোস্ট অফিস মোড়, বাজার মোড়, পশ্চিমপাড়া তেপথি, কলেজ মোড়, শনি মন্দির মোড়, পচাগড় তেপথি, মদনমোহনবাড়ি মোড় সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যত কোনও কাজেই আসবে না এই আশঙ্কা যখন সাধারণের। তখন অন্যদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে একে অপরকে দোষারোপের পালা।
মাথাভাঙ্গা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে সঞ্জীব পোদ্দার বলেন, ‘শহরে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে চুরির ঘটনায় মাথাভাঙ্গা থানার তৎকালীন আইসির অনুরোধে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে শহরের ১২টি জোনে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার সহ ৪৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। এজন্য ব্যবসায়ী সমিতির খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।’ তাঁর দাবি, ক্যামেরা লাগানোর সময়েই তাঁদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে সেগুলি চালানোর ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বিল এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পুরসভাকেই বহন করতে হবে। পুরসভা তাতে রাজিও হয়েছিল। অথচ বিগত দু’বছর ধরে পুরসভার পক্ষ থেকে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সমস্ত ক্যামেরাগুলি বিকল হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, যে সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবসায়ী সমিতি এই ক্যামেরা কিনেছিল সেই সংস্থার পক্ষ থেকে সুদীপ্ত সরকার জানিয়েছেন ক্যামেরাগুলি বিক্রির সময় তাঁদের সঙ্গে এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি ছিল। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীকালে নতুন করে চুক্তি হয়নি। ফলে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রোদ-জলে সেগুলির কোনওটিই বর্তমানে কার্যকরী অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা কম বলেই তাঁর অনুমান।
পুরসভার চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিকের যুক্তি, ‘পুলিশ ও ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সে সময় আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ওই দুই কর্তৃপক্ষের তরফে আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পুরসভা বহন করতে রাজি আছে।’ কিন্তু এজন্য ব্যবসায়ী সমিতি এবং পুলিশ প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে অবশ্য মাথাভাঙ্গা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মাথাভাঙ্গা শহরের চৌপথির ব্যবসায়ী কাজল পাল এতদিন জানতেন সেখানে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি সচল আছে। তবে পাশের ব্যবসায়ী বাবলু দাস যখন তাঁকে জানান সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে বিকল, তখন থেকে নিজের দোকানের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন। আর চিন্তা শুধু তাঁর নয়, বরং ওই এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ী এবং সাধারণেরও।