নাগরাকাটা: দিন কে দিন কাঁচা পাতার মান পড়ে যাচ্ছে কেন? যাচাই করে দেখতে ১১ সদস্যর কমিটি গঠন করল টি বোর্ড। আগামী ৩ মাস ওই কমিটি বোর্ডের কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন চা বণিকসভা সহ উত্তরবঙ্গের চা মহল। টি বোর্ডের নির্দেশক চেয়ারম্যান সৌরভ পাহাড়ি বলেন, ‘কমিটি কী কী কারণ খুঁজে পায় এবং তাঁদের পরামর্শ সমস্ত কিছু বিবেচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। চায়ের উতকর্ষতা বৃদ্ধিই টি বোর্ডের লক্ষ্য।’
১১ সদস্যর যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার চেয়ারপার্সন হিসেবে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টি বোর্ডের গুয়াহাটির জোনাল কার্যালয়ের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরুণিতা ফুকন যাদবকে। কমিটিতে রয়েছেন বড় বা শেড বাগান, ক্ষুদ্র চা চাষি সহ বটলিফ ফ্যাক্টরির প্রতিনিধিরা। উত্তরবঙ্গ থেকে রয়েছেন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিস্টা) সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী, বটলিফ ফ্যাক্টরির মালিকদের সংগঠন নর্থ বেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে টি বোর্ডের ২৪৮তম বার্ষিক সভায় কাঁচা পাতার মান পড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথা উঠে আসে। ওই সভাতেই ঠিক হয় বিষয়টি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই মোতাবেক শুক্রবার টি বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করে ওই কমিটি গঠন ও তাঁদের কাজ সংক্রান্ত বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।
টি বোর্ড জানাচ্ছে, কমিটির সদস্যরা বাগানে ঘুরে কাঁচা পাতার মান পরখ করবেন। ফাইন লিফ কাউন্টিং অর্থাৎ ১ কিলোগ্রাম কাঁচা পাতা তুললে তা থেকে কি পরিমাণ ভালো মানের উৎপাদন যোগ্য পাতা মিলছে তা দেখবেন। সমস্যা ও ঘাটতিগুলি চিহ্নিত করে টি বোর্ডের কাছে তাঁদের সুপারিশ সহ রিপোর্ট পেশ করবেন।
চা মহল সূত্রে খবর, বর্তমানে বাগানগুলি নানা সমস্যায় জেরবার। এর মধ্যে অন্যতম জলবায়ুর পরিবর্তনের কুপ্রভাব। এর ফলে গাছে ভালো মানের পাতা আসছে না। দুটি-পাতা একটি কুঁড়ির বৃদ্ধি প্রায়শই থমকে থাকছে। গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে পাল্লা দিয়ে লুপার, রেড স্পাইডার, থ্রিপস, হেলোপেলটিসের মতো নানা ধরনের রোগপোকার হামলা। চলতি বছরে চায়ের নিলাম মূল্যও গত বারের থেকে কম। উত্তরবঙ্গের ফার্স্ট ও সেকেন্ড দুটি ফ্লাশেরই উৎপাদন কমেছে।
চা মালিকদের অন্যতম সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিএ) চেয়ারপার্সন নয়নতারা পালচৌধুরী বলেন, ‘গুনগতমানের উৎপাদনই এখনকার বাজার অর্থনীতির শেষ কথা। টি বোর্ড এই বিষয়টির ওপর জোর দেওয়ায় তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য।’ আরেকটি সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপিএ) ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা বলেছেন, পাতার মান কেন নিম্নমুখী তার কারণ খোঁজা সময়ের চাহিদা ছিল। এব্যাপারে টি বোর্ড অগ্রসর হওয়ায় সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে বলেই দৃঢ় বিশ্বাস। তবে তৈরি চায়ের চাহিদা ও সেই সঙ্গে চা বাণিজ্যের বাজারে টিকে থাকার মতো দাম প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। খানিকটা একই সুরে সদ্য গঠিত কমিটির সদস্য ও সিস্টার সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্ষুদ্র চাষিদের উৎপাদিত কাঁচা পাতার ন্যায্য দাম বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি উপাদনের গুনগতমান কে যাচাই করবে সেই প্রশ্নও রয়েছে।’