জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি: কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পাঁচটি চা বাগানের (Tea garden) শ্রমিকরা দু’বছর ধরে পিএফের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) (PF) টাকা পাচ্ছেন না। চা বাগান পরিচালন কর্তৃপক্ষ সেই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পিএফ দপ্তরে জমা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। বকেয়ার পরিমাণ ১১ কোটি টাকার বেশি। এর জেরে ৬ হাজার কর্মরত শ্রমিক সহ প্রায় ১ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। মজুরি ও বেতন থেকে পিএফের টাকা কেটে নেওয়ার পরেও তা জলপাইগুড়ি জেলার নিউ ডুয়ার্স, বানারহাট, কারবালা, চুনাভাটি এবং দার্জিলিং জেলার মিম চা বাগানের পরিচালন কর্তৃপক্ষ জমা করেনি। শুধু তাই নয়, বাগানকর্মীরা আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। শ্রমিকদের এক মাসের মজুরি বাকি পড়ে রয়েছে।
এদের মধ্যে বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের অবস্থা করুণ। ইতিমধ্যে আইএনটিইউসি অনুমোদিত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পাদক মণিকুমার দার্নাল কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প ও স্টিল দপ্তরের মন্ত্রী এইচডি কুমারাস্বামীকে চিঠি দিয়ে দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন। পিএফ আইন ভাঙার দায়ে এই পাঁচটি চা বাগানের বিরুদ্ধে পিএফ কর্তৃপক্ষ কোনও কড়া পদক্ষেপ করেনি। সর্বভারতীয় ইউটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক তথা পিএফ উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য অশোক ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অন্য যে কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিএফ আইন লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই পাঁচটি বাগানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আরও গুরুতর অভিযোগ করে তাঁর সংযোজন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার চা মালিকদের পক্ষ নিয়েছেন। বকেয়া পিএফের ওপর মালিকপক্ষকে সুদ দিতে হয়। বর্তমান বিজেপি সরকার এই সুদের হার মালিকদের স্বার্থে একেবারে সামান্য করেছে।
আইএনটিইউসি’র সূত্রে খবর, শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে অসহায়ভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। স্টাফরাও বেতন না পেয়ে হতাশ। কাজ করার পর বেতন পাওয়া কর্মীদের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পাদক মণিকুমার দার্নালের দাবি। এদিকে বকেয়ার পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ছে। আইটিপিএ’র বীরপাড়া শাখার প্রধান রামঅবতার শর্মা জানান, আগে চা শিল্পে কোনও দিন এত বড় সংকট সৃষ্টি হয়নি। চায়ের উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া চা শিল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তাই আর্থিক মন্দার কারণে চা পরিচালন কর্তৃপক্ষরা শ্রমিকদের প্রাপ্য সময়মতো দিতে পারছে না। তবে পিএফ দপ্তরের তরফে এই পাঁচটি চা বাগান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বকেয়া শোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।