নাগরাকাটা: গত দশ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে এটা স্পষ্ট যে, চা শিল্প (Tea Industry) বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে। চায়ের দাম যে হারে বেড়েছে তার থেকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির হার কয়েকগুণ। ফলে সংকট ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষ চা বণিকসভা ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ)-এর ১৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বিষয়টি উঠে আসে। গত শুক্রবার কলকাতায় (Kolkata) ওই সভায় আইটিএ গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছে, চায়ের দামের বার্ষিক বৃদ্ধির হার (কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট বা সিএজিআর) যেখানে ২.৮৮ শতাংশ সেখানে উৎপাদনের উপকরণের ক্ষেত্রে ওই হার ১০-১২ শতাংশ। সংস্থার চেয়ারম্যান হেমন্ত বাঙ্গুর বলেন, ‘ন্যায্য দাম না পাওয়ার বিষয়টির পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও এখন বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সংগঠিত ক্ষেত্রের বড় বা সেট চা বাগানগুলির সঙ্গে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদনের একটি তুলনামূলক আলোচনাও ওই সভায় হয়। বর্তমানে উত্পাদনের দিক থেকে বড় বাগানগুলি অনেকটাই পিছিয়ে। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে সেগুলি ক্রমশ রুগ্নতার শিকার। এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে কিছু কল্যাণকর খাতের খরচ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জিও আইটিএ’র তরফে জানানো হয়।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমসচিব অবনীন্দ্র মিনা, অসম সরকারের শিল্পবাণিজ্য দপ্তরের সচিব ডঃ লক্ষ্মণন এস প্রমুখ।
উত্তর ভারতের (অসম ও পশ্চিমবঙ্গ) মোট উৎপাদন এবছর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৩ মিলিয়ন কিলোগ্রাম কম ছিল বলে জানিয়েছে আইটিএ। সম্প্রতি ঘরোয়া বাজারে তৈরি চায়ের দাম সামান্য বাড়ায় ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে তা উল্লেখযোগ্য কিছু নয় বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
এছাড়া, বাগানগুলিতে শ্রমিকদের কাজে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা বাড়তে থাকায় ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে। নতুন গবেষণার পাশাপাশি দেশে চা পানকারীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপরও সভায় জোর দেওয়া হয়েছে।
যদিও চলতি বছরের অগাস্ট মাস পর্যন্ত গত বছরের ওই সময়কালের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ৩১ মিলিয়ন কিলোগ্রাম বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক দিক। পাশাপাশি রপ্তানি খাতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রপ্তানিজাত দ্রব্যের ওপর কর ছাড়ের যে প্রকল্পটি রয়েছে (রেমিশন অফ ডিউটিস অ্যান্ড ট্যাক্সেস অন এক্সপোর্টেড প্রোডাক্টস) তার পুনমূর্ল্যায়নের দাবির কথাও উঠে আসে। আগে ১.৭ শতাংশ হারে ওই ছাড় মিলত। সেটা কমিয়ে বর্তমানে ১.৪ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের সংকট কাটাতে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির তরফে বিশেষ সরকারি আর্থিক প্যাকেজের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেটার দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার বলে মনে করছে আইটিএ।