রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ : দেড় বছর শিক্ষকতার চাকরি করতে না করতেই আবার চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে বহু লড়াই করে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়া অনামিকা রায়কে। অনামিকার কথাতেই, তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আবার পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি পেলে সেই চাকরিরও নিশ্চয়তা কোথায়, এমন প্রশ্নও তুলছেন অনামিকা। তবে, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে আবার তিনি পরীক্ষায় বসবেন, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন অনামিকা।
আদালতে আইনি লড়াই করে শিক্ষকতার কাজে যোগদানের অধিকার পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনামিকা রায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজগঞ্জের হরিহর উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগদান করেন। কিন্তু হঠাৎই আবার অন্ধকারের ঘনঘটা তাঁর জীবনে। তবে, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় বের হওয়ার পর শনিবার স্কুলে এসে ক্লাস নিয়েছেন অনামিকা। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেছেন।
এসএসসি-র নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ওঠে রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নিয়োগ ঘিরে। অনৈতিকভাবে র্যাংক জাম্প করে তাঁকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর নিয়োগ নিয়ে মামলা করেন আরেক চাকরিপ্রার্থী ববিতা সরকার। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অঙ্কিতার চাকরি বাতিল করে ববিতা সরকারকে শিক্ষকতার কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপরেই আসরে নামেন অনামিকা রায়। ববিতা আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছেন এই অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। দ্বিতীয় দফায় আইনি লড়াইয়ের পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ববিতার চাকরি বাতিল করে অনামিকা রায়কে সেই পদে নিয়োগের রায় দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের চার মাস পরে রাজগঞ্জের হরিহর উচ্চবিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন অনামিকা।
এদিন তিনি বলেন, ‘নতুন করে আবার পরীক্ষায় বসা এবং আরেকবার জন্ম নেওয়া দুটোই আমার কাছে সমান। ছয় বছর আগে যে পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় বসেছি বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে, সেইসঙ্গে স্কুলে এসে ক্লাস নিতে হবে। সংসার আর স্কুল সবকিছু সামলে পড়াশোনা করে আবার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। এটা আমার খুব খারাপ লাগছে। কারণ একবার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই শিক্ষকতার চাকরিটা পেয়েছিলাম।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, আবার হয়তো পরীক্ষা দিয়ে পাশ করব, শিক্ষকতার কাজে যোগদান করব। কিন্তু দু’বছর পর আবার কারও পাপের জন্য যে পরীক্ষায় বসতে হবে না, এই গ্যারান্টি কোথায়? আবার পরীক্ষা দিতে হবে, আদালতের এই রায়ে আমার মতো প্রচুর শিক্ষক-শিক্ষিকা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।’