রায়গঞ্জ: বিয়ের নামে ১৬ বছরের এক নাবালিকাকে উত্তরপ্রদেশে বিক্রি করে দিয়েছিলেন দুই মহিলা। শেষ পর্যন্ত রায়গঞ্জের এক শিক্ষকের চেষ্টায় বছর দুয়েক পর বাড়ি ফিরেছে সদ্য তরুণী। তাঁকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষককে খরচ করতে হয়েছে তিন লক্ষ টাকা।
ঘটনাটি চাকুলিয়া ব্লকের একটি গ্রামের। একসময় নাবালিকা তার পরিবারের সঙ্গে সেই গ্রামে থাকত। ওই গ্রামে থাকতেন অভিযুক্ত দুই নারী পাচারকারী মহিলাও। কিন্তু নাবালিকার বাবা-মা মারা যাওয়ায় তাকে জলপাইগুড়ির একটি গ্রামে নিজেদের কাছে নিয়ে চলে যান দিদা ও মাসি। অভিযোগ, ওই দুই মহিলা পাচারকারী জলপাইগুড়ি গিয়ে দিদা ও মাসিকে বলেন, তাঁরা নাবালিকার জন্য উত্তর প্রদেশে পাত্র ঠিক করেছেন। ভুল বুঝিয়ে নাবালিকাকে এটওয়ারের একটি গ্রামে বিক্রি করে দেন তাঁরা।
বিষয়টি জানতে পারেন রায়গঞ্জের একটি স্কুলের শিক্ষক। তিনি আবার মেয়েটির দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, চাকুলিয়ার ওই দুই মহিলা পাচারকারী নাবালিকাকে উত্তরপ্রদেশে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি ওই দুই মহিলার সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন। কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গেও। প্রায় ছ’মাস বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য পেয়ে তিনি মেয়েটির ঠিকানা সংগ্রহ করেন। তিনি প্রথমে নাবালিকার মাসি সহ দুই মহিলাকে এটওয়ারের ওই গ্রামে পাঠান। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দেয় নাবালিকার ক্রেতারা। এরপর তিনি নিজেই নাবালিকার ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিন লক্ষ টাকা না পেলে নাবালিকাকে তারা ছাড়বে না। শেষ পর্যন্ত ওই টাকা দিয়ে তিনি মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনেন। এখন অবশ্য সেই নাবালিকা সদ্য তরুণী।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই মহিলা তিন লক্ষ টাকায় উত্তরপ্রদেশের এটওয়ার জেলার একটি গ্রামে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেন। মেয়ের দিদা ও মাসিকে ভুল বুঝিয়ে তাঁরা এই কাজ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিন লক্ষ টাকা দিয়ে মেয়েটিকে ফিরিয়ে এনেছি। মেয়েটি এখন মাসির বাড়িতে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মেয়েটির উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছে। তাকে উপার্জনের কাজে লাগানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপারকে বিক্রেতা দুই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। ওই দুই মহিলা এলাকার আরও দুটি মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন। একজন শিক্ষক হিসাবে এই অন্যায় আমি মানতে পারছি না। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।‘
চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় নারীপাচার চক্র। দালালদের খপ্পরে পড়ে বহু বাবা-মা মেয়ে হারিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত দুই মহিলার ফোনের সুইচ অফ থাকায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জেলায় নারীপাচার প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জবা ভট্টাচার্য বলেন, ‘চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর এলাকায় নারীপাচার চক্র ভীষণ সক্রিয়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তারা গরিব ঘরের মেয়েদের ভিনরাজ্যে বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সব জেনেশুনেও দালালদের হাতে মেয়েদের তুলে দিচ্ছেন গরিব মানুষজন। এই গ্রামগুলিতে সচেতনতা প্রচারের প্রয়োজন আছে।’ যদিও এই ঘটনায় চাকুলিয়া থানা বা কানকি ফাঁড়িতে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেই জানাচ্ছে পুলিশ।