শীতলকুচি: অঙ্কের শিক্ষক সৌভিক বর্মন অঙ্কটা ভালোই কষেছিলেন। ৮১ জন পড়ুয়ার প্রাপ্য ৬৪,৮০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। পড়ুয়াদের শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে শেষপর্যন্ত তাঁর ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে। শনিবার রাতে শীতলকুচি থানার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক সৌভিককে গ্রেপ্তার করে। শীতলকুচি হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন তিনি। রবিবার অভিযুক্তকে মাথাভাঙ্গা মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে আটদিনের পুলিশ হেপাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে স্থানীয় শিক্ষা মহলে।
পড়ুয়ারা বছরে ৮০০ টাকা করে বৃত্তি পেত। সেই টাকাই হাতানোর অভিযোগ উঠেছে সৌভিকের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত মাসে। গোলেনাওহাটি গ্রামের বাসিন্দা তথা ধূপগুড়ি কলেজের অধ্যাপক সফিকুল মিয়াঁ ও আজমিরা বিলকিস প্রামাণিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শিক্ষাশ্রী বৃত্তির টাকা ঢোকে। তাঁরা হতভম্ব হয়ে যান। সৌভিকের কাছ থেকে টাকা পেতেন সফিকুল। তাঁকে টাকা দেবেন বলে সৌভিক সফিকুলের কাছ থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংক ডিটেলস নিয়েছিলেন। সরকারি বৃত্তির টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন অধ্যাপক। পরে ঘটনাটি কোচবিহার ডিস্ট্রিক ওয়েলফেয়ার অফিসারকে জানান। সংশ্লিষ্ট দপ্তর শীতলকুচি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও নোডাল অফিসারকে চিঠি পাঠায়। এই চিঠির জবাব পাঠাতে গিয়েই সামনে চলে আসে সেই শিক্ষকের কুকীর্তি। অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নয়জন পড়ুয়ার টাকা ঢুকিয়েছেন। সেইসঙ্গে তাঁর স্ত্রী, ভাই সহ বেশ কয়েকজন পরিচিতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও টাকা ঢুকিয়েছেন।
পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ধার করতেন সেই শিক্ষক। পরে অনলাইন পেমেন্ট করার কথা বলে ব্যাংক ডিটেলস নিতেন। এরপরেই শিক্ষাশ্রী পোর্টাল থেকে ‘ঋণ পরিশোধ’ করতেন।
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পবিত্র বর্মন বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করুক। সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে পুলিশকে।’ আর শীতলকুচি থানার ওসি অ্যান্থনি হোড়ো জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। সেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তাপস বর্মনের কথায়, ‘আমাদের স্কুলের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম নষ্ট করলেন ওই অঙ্কের শিক্ষক। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’ আর এক প্রাক্তন পড়ুয়া ঋষিতা সরকারের কথায়, যে শিক্ষক পড়ুয়ার বৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেন, তিনি তো পুরো শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক। এব্যাপারে শিক্ষা দপ্তর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’