শমিদীপ দত্ত, তিস্তাবাজার: একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভয়াল ভয়ংকরী তিস্তা। পাশের রাস্তাজুড়ে দু’পাশে সারি সারি দোকান, বাড়ি। নদীর ধারে থাকা বাড়িগুলোতে গত অক্টোবরের হ্রদ বিপর্যয়ের ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। কিছু বাড়ি তো ধ্বংসাবশেষ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু। সদ্য পড়া পলির স্তরে ক্ষতগুলো যেন আরও প্রকট। তিস্তা যেভাবে গিলতে আসছিল বাড়িঘরগুলোকে, তাতে এখন মুহূর্তের স্বস্তিও পাচ্ছেন না তিস্তাবাজারের (Teesta Bazaar) বাসিন্দারা।
সিকিমে (Sikkim) বৃষ্টি কমায় জল নেমেছে তিস্তার। রবিবার দোকানপাটও খুলেছে তিস্তাবাজারে। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও চোখেমুখে আতঙ্ক তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের। কথা বলতেই প্রত্যেকের মুখে শোনা গেল আশঙ্কার কথা। প্রায় প্রত্যেকেই একবাক্যে জানিয়ে দিলেন, পুনর্বাসন পেলে তাঁরা এলাকা ছাড়তেও রাজি। ফলে প্রশ্ন উঠল তিস্তাবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়েও।
বছর ষাটের লক্ষ্মী শর্মাই যেমন উথালপাতাল তিস্তার দিকে চেয়ে হতাশার সুরে বললেন, ‘বৃষ্টি হলেই একতলা সমান জল উঠে যাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন এখানে থাকা যাবে? অক্টোবর মাসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কোনওভাবে টাকা জমিয়ে বাড়িটা ঠিক করেছিলাম। ফের পলি ঢুকে গেল। ক্ষতিপূরণ পেলে অন্য কোথাও চলে যাব।’
মহম্মদ হাসনাদ টেনে নিয়ে গিয়ে দেখালেন তাঁর মুদি দোকানের ছবিটা। হাঁটুসমান পলি পড়েছে দোকানের ভেতর। পাশে একটি গ্যারাজে থাকা বাইক, স্কুটারও অর্ধেক পলিচাপা। হাসনাদের কথায়, ‘এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিনমজুরির কাজ করেন। নদীর ধারে যাঁদের বাড়ি গতবছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই এখন ওপরের দিকে ভাড়া নিয়ে থাকছেন।’ কতদিন এভাবে থাকা সম্ভব, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রবিবার তিস্তাবাজারে ঢোকার মুখেই দেখা গেল, সেখানে রেলিং দিয়ে রাস্তা আটকানো। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখার পর ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলল। কিন্তু কিছুটা থমকাল গাড়ির চাকা। সেখানে রাস্তাজুড়ে পলি জমে। নির্মীয়মাণ রেলসেতুর কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেতুর নীচ দিয়ে জল তখনও রাস্তায় ঢুকছে।
কিছুটা এগোতেই হাতের ডানদিকে নদীর গা ঘেঁষে সারি সারি বাড়ি। অধিকাংশেরই ভগ্নদশা। প্রতিটির ঘরের ছাদ রাস্তার সমান সমান। সেরকমই একটি বাড়ির ছাদে বসে ছিলেন মনোরঞ্জন সরকার। জানালেন, যে বাড়ির ছাদের ওপর তিনি বসে রয়েছেন আগে সেখানেই থাকতেন। কিন্তু হ্রদ বিপর্যয়ের রাতে সেই যে তাঁকে তড়িঘড়ি ঘর ছাড়তে হয়েছিল, আর ঢুকতে পারেননি। জিনিসপত্রও অনেককিছু ভেসে গিয়েছে তিস্তার বানে। এখন তিস্তাবাজারের ওপর ৯,০০০ টাকা দিয়ে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি।
ওই রাস্তার উলটোপাশেই একটা গ্যারাজ রয়েছে তাঁর। তিনদিন ধরে জল বেড়ে যাওয়ায় গ্যারাজটাও বন্ধ। মনোরঞ্জনের গলায় হতাশা, ‘কী করে চলবে আমাদের, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। কতদিন এই বর্ষায় গ্যারাজ খোলা রাখতে পারব তাও জানি না।’
জল নামায় তিস্তার পাড়ে পাথরে বসে দুঃখের গল্প করছিলেন সবিতা ছেত্রীরা। সবিতার গলায় একরাশ ক্ষোভ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি শুনেই বলতে শুরু করলেন, ‘সরকারের তরফে এই তিস্তাবাজারকে বাঁচাতে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হল না। আগেরবার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মালিকদের শুধু ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অথচ জল যাতে না ঢোকে, তার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ত্রিবেণি যাওয়ার পথে যাও বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেটাও ভেঙে গিয়েছে।’ আর এ সবকিছুর মধ্যেই পলিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া চকোলেটের বাস্কগুলো বাঁচিয়ে একপাশে রাখছিলেন সন্ধ্যা মাহাতো। নদীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ছেলের কোনও কাজ নেই। জল ঢুকে এই ছোট মুদিখানার দোকানে ২০,০০০ টাকা মালপত্র নষ্ট হয়ে গেল। চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে সবকিছু। এভাবে কতদিন থাকতে পারব, জানি না।’
সত্যিই যেভাবে ভয়ংকরী হয়ে উঠছে তিস্তা, তাতে তিস্তাবাজার যদি অদূরভবিষ্যতে জনমানবহীন হয়ে যায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতার আসনে রাহুল গান্ধি (Rahul Gandhi)। দায়িত্ব হাতে নিয়েই…
শামুকতলা: ৩১সি জাতীয় সড়ক ধরে মহাকাল চৌপথির দিকে যেতেই বাঁদিকে পুঁটিমারি হাইস্কুলের পাশ দিয়ে দুর্গাবাড়ি…
মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: সম্ভবত এমন পরিস্থিতিতেই বলা হয়, ‘আমও গেল, ছালাও গেল’। স্বামী রুজির…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: খাস কলকাতায় মহিলা যাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এক অ্যাপ ক্যাব চালকের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সায়ন্তিকা ও রায়াতের শপথ নিয়ে মিলছে না সমাধানসূত্র। একদিকে রাজভবনে (Rajbhawan)…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: নিয়ম না মেনে স্কুল চত্বরে ফোন ব্যবহার করেছিল এক ছাত্র। তার…
This website uses cookies.