অমিতকুমার রায়, হলদিবাড়ি: শীতে ঘন কুয়াশা আর বর্ষায় তিস্তার জলই তুরুপের তাস গোরু পাচারকারীদের(Cow Smuggling)। এখনও সেভাবে বর্ষা শুরু হয়নি, তার আগেই তিস্তা নদীর জলস্তর বাড়ায় রমরমিয়ে চলছে পাচার। কখনও থার্মোকল আবার কখনও কলার ভেলা বা নৌকায় করে রাতের অন্ধকারে এপার থেকে গোরু ওপারে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, জলের স্রোতে বাইকের টিউবে বেঁধে গোরু ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে, স্থলপথে বাড়তি নজরদারি থাকলেও জলপথে সেভাবে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই বিএসএফের(BSF)। এতে বাড়বাড়ন্ত আরও বেড়েছে পাচারকারীদের। তবে আগে নদীপথে নজরদারির জন্য বিএসএফের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। এবছর দুটি স্পিড বোট মিলেছে তাদের। পাশাপাশি পাচার রুখতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে। বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যে বোটের সাহায্যে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। নাইট ভিশন ক্যামেরারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সুফল মিলছে।
মেখলিগঞ্জ মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া নদীপথে গোরু পাচারকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ঝাড়সিংহাসন এলাকায় দিনেরবেলা বাইকের টিউবের সঙ্গে গোরু বেঁধে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসতেই বিএসএফের তরফে স্পিডবোট দিয়ে সেই গোরু উদ্ধার করা হয়। সেখানে হলদিবাড়ির ব্লকের ঝাড় সিংহাসন এলাকায় ৪০ নম্বর ব্যাটালিয়নের বরুণ ক্যাম্পের বিএসএফ জওয়ানরা নদীপথে নজরদারি চালাচ্ছে।
মহকুমার সীমান্তবর্তী হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জ ব্লকের ঠিক মাঝবরাবর এলাকা দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে(Bangladesh)) প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নদীর পাশে পাচারকারীরা নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিয়ে গোরু পাচার করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর নদীতে জল বাড়লেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এবছরও শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীরা কিছু তরুণকেও সেই কাজে লাগিয়েছে। পার্শ্ববর্তী জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের গৌরীহাট, ঘুঘুডাঙ্গা সহ একাধিক হাট থেকে পাচারকারীরা গোরু কিনে বাঁধ সংলগ্ন ও নদীর চরে নিজেদের ডেরায় জড়ো করে রাখে। সন্ধ্যা হতেই বিএসএফের ‘ঢিলেঢালা’ নিরাপত্তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেগুলি নদীর ধারে নিয়ে আসে। সেখানে বাইকের টিউব ফুলিয়ে তার সঙ্গে গোরু বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর নদীর স্রোত বুঝে গোরুর পালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গোরুগুলি এরপর বাংলাদেশ সীমানায় ঠেকলে ওপারের পাচারকারীরা নদী থেকে তাদের তুলে নেয়। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে।
পারমেখলিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রমানাথ রায় বলেন, ‘সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অবৈধ পাচার রুখতে বিএসএফকে জানানো হবে।’