মহারাষ্ট্রে নিহত দুই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরল গ্রামে, আর্থিক সহায়তা প্রদান সরকারের

ধূপগুড়িঃ রাত তখন দেড়টা ছুঁই ছুঁই, বাড়ির সামনে হঠাৎই অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াতেই কিছু একটা আচ করেছিল প্রদীপের মা ও স্ত্রী। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স থেকে যে প্রদীপের নিথর দেহ নামবে তা দু:স্বপ্নেও ভাবে নি মৃতের স্ত্রী অনিমা রায়। নিমেষেই চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়  দুর্ঘটনায় প্রদীপ আহত নয় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। নেহাতই মিথ্যা কথা বলেছিল তাঁদের আত্মীয়রা।

মহারাষ্ট্রে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় প্রান কেড়ে নিয়েছে তরতাজা যুবক প্রদীপ রায়ের। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ ঝাড় আলতা ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর কাঠুলিয়ার বাড়িতে প্রদীপ রায়ের এবং পশ্চিম ডাউকিমারিতে গনেশ রায়ের মৃতদেহ পৌছায়। মহারাষ্ট্রের থানের শাহপুরে ক্রেন চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই অন্তত ১৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের দু’জন এবং ধূপগুড়ি ব্লকের দুজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। ধূপগুড়িতে গনেশ রায়ের পরিবার ঘটনার পরই আত্মীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে যায়। তারপরই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার।

এদিকে প্রদীপ রায়ের আত্মীয়দের কাছে মৃত্যুর খবর পৌছালেও স্ত্রী, মা ও দুই সন্তানকে বুঝতে দেয় নি। মূলত প্রদীপ বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী এবং বৃদ্ধা মা ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এই আশঙ্কাতেই শুধু মাত্র ছোটখাটো দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে এবং চিকিৎসা চলছে বলেই জানায় আত্মীয়রা। সামান্য দুর্ঘটনায় ছেলে আহত হওয়ার খবরেই বৃদ্ধা মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই আত্মীয়রা কিভাবে মৃত্যুর খবর জানাবে তা নিয়েই চাপের মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে মৃতদেহ সামনে আসতেই সবটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবার শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব ও এসজেডিএ চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়িতে মৃতদের বাড়িতে যায়। সেখানে ঘোষিত ক্ষতিপূরণের দুই লক্ষ করে টাকার চেক তুলে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার রয়েছে বলেও জানায়। মৃত প্রদীপ রায়ের কাকা যোগেশ রায় জানিয়েছেন, ‘ক্ষতিপূরণ বাবদ চেক দেওয়া হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেটি নেই। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। তাদের পাশে রয়েছে সরকার। পুর প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপারসন ও  ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাকীদের কাছে ওই পরিবারের পাশে সবসময় থাকতে বলেছি। একইসঙ্গে কোনও সমস্যা হলেও যেন দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়’।