কোচবিহার ও দিনহাটা: সোমবার সকাল ছিল বসন্তপঞ্চমীর দ্বিতীয় দিন। আর পুজোর শেষ দিনের ভিড় যেন টেক্কা দিল প্রথম দিনকেও। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ পঞ্চমী শেষ হতেই কোচবিহার থেকে দিনহাটা এমনকি তুফানগঞ্জ শহরের স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পার্কে ভিড় জমায় যুগলরা। রাস্তাগুলিও এদিন ছিল ভিড়ে ঠাসা। ম্যাচিং করা শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে জমিয়ে আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর খাওয়াদাওয়া সেরে দু’দিনের সরস্বতীপুজোর আনন্দ উপভোগ করলেন সকলে।
এদিনের ভিড় যেন অষ্টমীর সকালকেও হার মানায়। সকাল সকাল পুজোর অঞ্জলি সেরে দুপুর থেকেই প্রেম দিবস উদযাপনের জন্য অনেকেরই ডেস্টিনেশন ছিল শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি। কেউ আবার প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন পার্কেও। প্রথম দিনের ভিড়কে দ্বিতীয় দিনের ভিড় যেন অনেকটা ছাপিয়ে যায়। দিনহাটা শহরের সংহতি ময়দানে প্রতিবছর সরস্বতীপুজোর আয়োজন করেন স্থানীয় কয়েকজন তরুণ মিলে। আর এই পুজোকে ঘিরে নবীন প্রজন্মের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। সুন্দর মুহূর্তকে সেলফিতে ধরে রাখার পাশাপাশি অনেকেই অনুষ্ঠানেও মেতে উঠেছিলেন। আবার কারও গন্তব্য ছিল দিনহাটা কলেজ। কেউ বা এদিন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালেন দিনহাটা কফি হাউসে। তবে এদিন স্টুডিওর আগের সেই ভিড় যেন উধাও ছিল।
রবিবার শহরের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসে পুজো হয়ে গেলেও এদিনও শহরের রামভোলা উচ্চবিদ্যালয়, সুনীতি অ্যাকাডেমি সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুজো হয়। প্রথম দিনের মতোই এদিনও ভিড়ে ঠাসা ছিল এবিএনশীল কলেজ, ইউনিভার্সিটি বিটি অ্যান্ড ইভনিং কলেজ চত্বর। সকাল থেকেই শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলির ভিড় সামলাতে চলে পুলিশি টহলদারিও। বিনা হেলমেটে যাতায়াত করায় বহু রোমিও-জুলিয়েটদের জরিমানা করতে দেখা যায় পুলিশকে।
দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে বন্ধুকে নিয়ে খাবার খেতে ঢুকেছিলেন সুস্মিতা দেব। সেখানের অধিকাংশ টেবিলই ভর্তি থাকায় খাবার খেতেও অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। সুস্মিতা বলেন, ‘বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর এদিন রেস্টুরেন্টে জায়গা মেলে। সেভাবে সমস্যা না হলেও দুপুরের খাবার খেতে ৪টা পার হয়ে গিয়েছিল।’
প্রথম দিনের মতোই রাজবাড়ি পার্কে টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। শহরের তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার এমনকি গ্রামীণ এলাকার বহু মানুষ ও এদিন রাজবাড়িতে ভিড় জমান। ভিড়ে ঠাসা ছিল রসিকবিল মিনি জু, শহরের নরেন্দ্রনারায়ণ পার্কও। প্রতিবছরই সরস্বতীপুজোকে কেন্দ্র করে মধুপুরধামের মেলা আয়োজিত হয়। সেই মেলা ঘুরতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর দর্শনার্থীদের জমায়েত লক্ষ করা গিয়েছে। সন্ধ্যায় তোর্ষা পাড়ের রেস্টুরেন্টে কিংবা সাগরদিঘির ফুড কোর্টেও ভিড় ছিল যথেষ্টই। বৈরাগীদিঘি থেকে শুরু করে সাগরদিঘির ঘাটগুলিও এদিন ছিল ভিড়ে ঠাসা। সব মিলিয়ে দু’দিনের সরস্বতীপুজোর আনন্দ যেন জমিয়ে উপভোগ করেছেন কোচবিহারের তরুণ-তরুণীরা।