হাসিমারা: দৃঢ় লক্ষ্য ও কঠিন অধ্যাবসায় থাকলে, যে কোনও প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। তা আরও একবার প্রমাণ করলেন কালচিনি ব্লকের ভার্নোবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের মেয়ে রূপনী মিঞ্জ ওরাওঁ। রূপনী এখন একজন চিকিৎসক। ২০১৯ সালে রূপনী নিটে উত্তীর্ণ হন। এরপর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে পঠনপাঠন শুরু করেন। রবিবার সেখানে বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রূপনীর হাতে শংসাপত্র তুলে দেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব। মেয়ের এমন সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রূপনীর বাবা রঘু মিঞ্জ ওরাওঁ ও মা সরিতা খাড়িয়া।
আর পাঁচজন চা বাগান শ্রমিক পরিবারের মেয়ের মতো পড়াশোনা করা সহজ ছিল না রূপনীর জন্য। চা বাগানে শিক্ষার আলো এখনও সেভাবে পৌঁছায়নি। তাঁর ওপর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা চা বাগানের শ্রমিকদের নিত্যসঙ্গী। রূপনীর মা সরিতা চা বাগানের শ্রমিক। বাবা রঘু মূলত সমাজকর্মী।
মেয়ের সাফল্য নিয়ে রঘুর বক্তব্য, ‘চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের অনেক প্রতিকূল পরিবেশে বড় হতে হয়। রূপনী ছোটবেলা থেকে বলত চিকিৎসক হয়ে সমাজসেবা করবে। অবশেষে সে তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোয় আমরা খুশি। রূপনীকে দেখে চা বাগানের আরও পড়ুয়ারা অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করি।’ এদিন মেয়ে যখন শংসাপত্র নিতে মঞ্চে ওঠেন তখন তাঁর বাবা-মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু বইতে শুরু করে।
রূপনীর ছোট ভাই মণীশও কিছুদিন আগে নিটে সফল হয়েছেন। মণীশ বর্তমানে বহরমপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন। রূপনীর বোন আশা কলকাতায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। রূপনীর বাড়ি ভার্নোবাড়ি চা বাগানের ক্লাবলাইনে। মেয়ের এমন সাফল্যের দিনে মেডিকেল কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রূপনীর বাবা রঘু, মা সরিতা ও তাঁর ভাই ও বোন।
কীভাবে পড়াশোনা করেছেন এবিষয়ে রূপনী জানালেন, চা বাগানের স্বাস্থ্য পরিষেবা এখনও পর্যাপ্ত নয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। পরবর্তীতে চা বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে রূপনীর।
রবিবার ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস। রূপনী ছোট বেলা থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন মা কত কষ্ট করে তাঁদের পড়াশোনা শেখার ব্যবস্থা করেছেন। তাই তাঁর এই সাফল্য মায়ের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রূপনী। এছাড়াও তাঁর সাফল্যের পেছনে বাবারও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।