শতাব্দী সাহা, চ্যাংরাবান্ধা: মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধায় একসময় বিরাট তামাকের হাট বসত। এখন আলাদা করে হাট না বসলেও চ্যাংরাবান্ধায় রয়েছে তামাকের বহু বড় গুদামঘর। চ্যাংরাবান্ধার ব্যবসায়ীরা ব্লকের নানা জায়গাতেই তামাক কেনাবেচা করেন। আর এই তামাকের গুদামগুলোতে দীর্ঘদিন কাজ করেন মহিলা তামাক শ্রমিকরা। যদিও তামাকের ধুলো, গুঁড়ো থেকে কাশি শ্বাসকষ্টের মতো কিছু প্রাথমিক সমস্যা মাঝেমধ্যে হয়। তবুও চ্যাংরাবান্ধা ও ভোটবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু মহিলা শ্রমিকের কাছে এটাই লক্ষ্মী। পুজো-ইদে বাচ্চাদের নতুন কাপড় থেকে পড়াশোনার খরচ সবটাই আসে তামাকের কাজ করেই। এইভাবেই প্রতিনিয়ত অভাবের অসুরকে বধ করে চলেন রক্তমাংসের দুর্গারা।
কৃষিপ্রধান পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি তামাক উৎপন্ন হয় কোচবিহার জেলায়। আর কোচবিহার জেলার প্রান্ত ব্লক মেখলিগঞ্জেও চাষ হয় তামাকের। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর থেকে তামাকের গুদামে তামাক ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ করেন চ্যাংরাবান্ধার আহিমা বেওয়া। তাঁর কথায়, ‘অসুখবিসুখ জানি না, এই কাজই আমার কাছে লক্ষ্মী। ১৫ টাকা হাজিরায় কাজ করতাম এখন ২৮০ টাকা হয়েছে। চুলের রং কালো থেকে সাদা হয়েছে এই কাজেই। একবার গুদামে এসে ঢুকলে ঝড়-বৃষ্টি যাই আসুক হাত চলার বিরাম নেই। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেকদিন। এই করেই ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। ওদের বিয়ে-সংসার সব হয়েছে। এখন মেয়েও আসে আমার সঙ্গে কাজে।’
ভোটবাড়ির বুচুরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সবিতা বর্মনের ঘরে আছে দুই ছেলে। তামাকের গুদামের এই কাজ করেই পরিবারের অভাব-অনটন সামলান সবিতা। তাঁর বক্তব্য, ‘ছোটটার পুজোর জামা কিনে দিয়েছি। আজকের হাজিরা পেলে বড়টার জামা কিনব। স্বামীর একার লেবারের কাজের আয়ে খাওয়া খরচ বাদে বাড়তি কিছু করাই মুশকিল। তামাকের কাজ করেই আমি কিছুটা সামলে নিই।’
পাশে বসে দ্রুত হাতে তামাকের বোঁটা বাছাই করছিলেন ভোটবাড়ির সিপাইবাড়ির মনুজ্জান বেগম। বললেন, ‘স্বামী নেই, ছোট ছোট এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে পরিবার। যখন যা কাজ জোটে করি। তামাকের মরশুমে এই কাজ ছাড়া অন্য কিছু ভাবি না। বাচ্চাদের টিউশন থেকে পড়া সব খরচ তামাকের কাজ থেকেই আসে।’ মূলত তামাক ঝাড়াই করে এর থেকে ডাঁটি, ছোট তামাক আলাদা করা, গুঁড়ো তামাক আলাদা করে রাখার (কোনওটা থেকে নস্যি তৈরি হয়, আবার কোনওটা খইনি) কাজ চ্যাংরাবান্ধা অঞ্চলে মহিলারাই বেশি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন তামাক ব্যবসায়ী দীনেশ পারেখ। তাঁর বক্তব্য, ‘পুরুষ, মহিলা সকলেই গুদামে কাজ করেন। তবে পুরুষরা তামাকের গাঁট বাঁধা, তামাক বাঁধাই, গাড়িতে তোলা এসব করেন। আর ঝাড়াইয়ের কাজ বরাবরই মহিলারা করেন।’