পলাশবাড়ি: একটি শিমুল গাছকে ঢাল হিসেবে কাজে লাগিয়ে বাইসনের সঙ্গে রীতিমতো ১০ মিনিট লড়াই। হয়তো একটু অবাক হচ্ছেন। হ্যাঁ এই অসম লড়াই করে নিজের প্রাণরক্ষা করেছেন ৪৯ বছর বয়সের এক কৃষক। রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম কাঁঠালবাড়ি গ্রামে। তবে শুধু শিমুল গাছকেই নয়, নিজেও উপস্থিত বুদ্বির জেরে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন শংকর সরকার। তবু সাত-আটবার আক্রমণ করে বাইসনটি। তবে শিং দিয়ে আঘাত করতে পারেনি। মাথা দিয়ে আঘাত করায় কোমর, হাত ও পায়ে চোট পান শংকর। এতে প্রাণরক্ষা হয়।
শংকরের সঙ্গে থাকা আরেক দিনমজুর রতিকান্ত বর্মন স্কোয়াশ খেতে আশ্রয় নেন। এক সাইকেল আরোহী সামান্য চোট পান। এই বাইসনের ভয়ে চাষিরা এদিন ভুট্টা ছেঁড়ার কাজ করতে পারেননি।
বন দপ্তর সূত্রে খবর, এদিন দুটি বাইসন বেরোয়। একটি বাইসন আসাম মোড়, রাইচেঙ্গায় দাপিয়ে বেড়ায়৷ সেটিকে বনকর্মীরা কুঞ্জনগরের জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেন। সেখানে কোনও ক্ষতি হয়নি। আরেকটি বাইসন সম্ভবত কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার জঙ্গল থেকে পশ্চিম কাঁঠালবাড়িতে চলে আসে। সেটিকে বিকেলের দিকে অজ্ঞান করে উদ্ধার করা হয়।
জলদাপাড়া সাউথের রেঞ্জ অফিসার রাজীব চক্রবর্তীর কথায়, ‘অজ্ঞান করার পর সুস্থ অবস্থায় ওই বাইসনটিকে পাতলাখাওয়ার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধারকাজে কোচবিহারের বনকর্মীরাও ছিলেন। আর জখম ব্যক্তির খোঁজ নেওয়া হয়। স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়।’
এদিন সকালে ভুট্টা ছেঁড়ার জন্য শ্রমিক রতিকান্ত বর্মনকে নিয়ে জমিতে যাচ্ছিলেন শংকর। হঠাৎ করেই বাইসনের মুখে পড়ে যান দুজন। রতিকান্ত পাশের স্কোয়াশ খেতে এসে শুয়ে পড়েন। কিন্তু শংকর পালাতে পারেননি। সেখানে খেতের আলপথে ছিল কয়েকটি শিমুল গাছ। একটি গাছের আড়ালে চলে আসেন তিনি। আর বাইসনটি পেছন দিক থেকে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। এই আক্রমণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেই গাছ। আসলে প্রথমে শংকরকে নাগালে না পেয়ে গাছটিকেই বাইসন আক্রমণ করে। ওই পরিস্থিতিতে শংকর উপস্থিত বুদ্ধির জেরে দৌড় না দিয়ে মাটিতেই শুয়ে পড়েন। তাতেও অবশ্য বাইসনটি হাল ছেড়ে দেয়নি। শংকর যখন মাটিতে শুয়ে তখন বাইসনটি দুই শিমুল গাছের ফাঁক দিয়ে এসেও সাত-আটবার আক্রমণ চালায়। তবে কোনওভাবেই শিংয়ের গুঁতো লাগাতে পারেনি। শুধু মাথা দিয়ে শংকরের কোমরে আঘাত করে। এভাবে দশ মিনিট ধরে চলে লড়াই। তারপর বাইসনটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে ততক্ষণে পরিজনরা ধরে নেন যে, বাইসনের হানায় শংকর হয়তো মারাই গিয়েছেন। শংকরের দাদা সুজিত সরকারের কথায়, ‘আমরা ধরেই নিয়েছিলাম বড় অঘটন ঘটেছে। তড়িঘড়ি ভাইকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ফালাকাটা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে এক্স-রে করাতে বলা হয়।’
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পর শংকর ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘শিমুল গাছ ও নিজে মাটিতে শুয়ে পড়ায় প্রাণরক্ষা হয়েছে। ধরেই নিয়েছিলাম যে, হয়তো প্রাণে বাঁচব না। বাইসনটি অনেক বড় ছিল। আমাকে মাথা দিয়ে সাত-আটবার ধাক্কা দেয়। তখন বাইসনের শিংগুলি মাটিতে লাগে। ভগবানের কৃপায় বেঁচে গিয়েছি।’
এদিকে মনেশ্বর বর্মন সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। আচমকাই বাইসনটি সাইকেলে ধাক্কা মারে। কিছুটা দূরে মনেশ্বর ছিটকে পড়েন। পায়ে সামান্য